মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিজুড়ে লাল-সবুজের পতাকা। টানটান উত্তেজনা। এরমধ্যেই আতাহার আলীর ভরাট কণ্ঠে উচ্চারিত হলো ‘বাংলাওয়াশ’। আনন্দে উচ্ছসিত বিপুল দর্শক। দেশের মাটিতে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রশংসনীয় জয় পেলো টাইগাররা। যে কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল সাকিব আল হাসানরা। এবার সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংলিশদের ১৬ রানে হারিয়ে বাংলাওয়াশের স্বাদ দিল তারা।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে উপচেপড়া ভিড় ছিল মিরপুরে। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ছেয়ে যায় লাল-সবুজের সমর্থকে। আশা নিয়ে মাঠে আসা সমর্থকদের হতাশ করেননি টাইগাররা। বাঘের গর্জনের মতোই উত্তেজনা ছড়িয়ে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। খেলা শেষে গ্যালারি থেকে বের হওয়া প্রাণবন্ত হাস্যজ¦ল মুখগুলো বলে দিচ্ছিলো এই জয় যেনো প্রত্যাশিত। হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন করেছিলেন ৭৩ রান। অন্যদিকে নাজমুল সংগ্রহ করেন ৪৭ । তাদের ব্যাটে ভর করে দুই উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকরা। এবার ম্যাচটি জেতার জন্য বোলারদের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাসকিন-মোস্তাফিজরা হতাশ করেননি। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানেই। ১৬ রানে ম্যাচ জিতে টাইগাররা বাংলাওয়াশ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। টার্গেট তাড়া করতে নেমে লজ্জা এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে বাটলার-মালানরা। তবে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শেষ হাসিটা হেসেছে টাইগাররা।
বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সল্টকে শূন্য রানে ফিরিয়ে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। গ্যালারিজুড়ে তখন তানভীর আর টাইগার-টাইগার ধ্বনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তানভীরের প্রথম উইকেট।
অবশ্য পাঁচ রানে সল্টকে হারানোর পর মালান-বাটলারের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। বিশেষ করে ডেভিড মালান এদিন শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথেই রাখেন এই ওপেনার।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ মালান সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ৪৩ বল খেলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। ৫৩ রান করে মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন মালান। মালান ফেরার পরের বলেই রান আউটে কাটা পড়েন বাটলার। বাটলারের বিদায় বলে দিচ্ছিলো, জয়ের পাল্লাটা ভারী হচ্ছে বাংলাদেশের। ইংলিশ অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। বিপরীতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর মঈন আলিকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। ৯ রান করা এই অলরাউন্ডারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। একই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন তাসকিন। এর ফলে দুই উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য ৩১ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর লেগের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ২৭ রান দরকার ছিল। হাসান মাহমুদের করা সে ওভারে ক্রিস ওকস দুটি চার মেরে কিছুটা রোমাঞ্চের জন্ম দিলে হতাশা থেকে মুক্তি মিলেনি। পরের বলগুলোয় তেমন কিছু করতে পারেননি ওকস ও ক্রিস জর্ডান। ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ১৪২ রানে। বাংলাদেশ দলের বোলারদের মধ্যে তাসকিন চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট নিয়েছেন। তবে চার ওভারে ১৪ রান নিয়ে এক উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তোলে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে রান তাড়া করে। আগের দুটি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বাংলাদেশ দল বোলিং দিয়ে ম্যাচ জয়ের মঞ্চ তৈরি করেছিলো। গতকাল ছিল ভিন্নতা। টসে হেরে সে সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। জস বাটলার টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। আর মিরপুরের ব্যবহৃত উইকেটে বাংলাদেশ দল ব্যাটিং করল রয়েসয়ে। রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে ১৬ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা। এর আগে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামে ছয় উইকেট এবং দ্বিতীয়টিতে চার উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
ভোরের আকাশ/আসা