logo
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:২৫
অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

পটুয়াখালীর বাউফলের ইটভাটা

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ঘনবসতি এলাকায় কৃষিজমি দখল করে চলছে অনুমোদনহীন একাধিক অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমির মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে কাঁচা ইট। কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। প্রভাবশালী ভাটা মালিকেরা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে ইট তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

 

এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রাদ্দি গ্রামের হানিফ উল্লাহ অটো ব্রিকস কোং লি. ও মের্সাস বন্ধু ব্রিকস নামের দুটি ইটভাটায়।

 

কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।

 

স্থানীয় কৃষক আ. রাজ্জাক তালুকদার গত ডিসেম্বরে ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ডিসি বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি ইউএনও।

 

সরেজমিন উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রাদ্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ফসলের মাঠজুড়ে গড়ে ওঠা এইচবিসি ব্রিকস নামের ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি চলছে। পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে ফসলি জমি থেকে খনন করা মাটি, গাছের গুঁড়ি ও চেরাই কাঠ। গাছ চেরাইয়ের জন্য ভাটার ভেতরেই স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।

 

ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা আছে, ‘জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না।’ তবে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ৩ বছর ধরে অবৈধভাবে ইট তৈরি করছেন এইচবিসি ভাটার মালিক মো. হানিফ উল্লাহ।

 

এ ছাড়াও এইচবিসি ব্রিকসের মালিক হানিফ উল্লাহর বিরুদ্ধে অসহায় কৃষকসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

 

স্থানীয় কৃষক আ. রাজ্জাক তালুকদার বলেন, হানিফ উল্লাহর ভাটার পাশে আমার ১ একর কৃষিজমি রয়েছে। ওই জমি ভাটার কাজে ব্যবহার করতে চায় হানিফ উল্লাহ। আমি জমি দিতে রাজি না হলে রাতের আঁধারে জমিতে বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করে জমি দখল করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।

 

আরেক বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ফোরকান বলেন, আমাদের পৈতৃক ভিটা ও ফসলি জমি দখল করে নিয়েছে এইচবিসি ভাটার মালিক হানিফ উল্লাহ। ক্ষমতাসীন হানিফ উল্লাহর কাছে আমরা অসহায়।

 

জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন এইচবিসি ভাটার মালিক হানিফ। অনুমোদন না নিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছি। অতি শিগগিরই পেয়ে যাব।

 

এইচবিসি ভাটার পাশে এমবিবি নামের একই ধাঁচের আরেকটি ভাটা। এ ভাটার চেহারাও আগের ভাটার মতোই। এখানেও ফসলি জমির মাটি ও কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হয়। ভাটার ভেতরেই রয়েছে করাতকলও।

 

বিএমএম ব্রিকসের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, কাঠ পোড়ানো বেআইনি ঠিক, তবে করার কিছু নেই। সারা দেশেই কাঠ পুড়ে ইট তৈরি করা হয়।

 

এই ভাটা দুটির পাশে অবস্থিত মোহসেনুদ্দিন ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ও ছালেহীয়া এতিমখানা (শিশু সনদ) নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভারী যানবাহনে করে ইট ও ইটের ভাটার কাঁচা মাল পরিবহন করায় এলজিইডির সড়কের বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। দানবাকৃতির ট্রলির ধোঁয়া ও রাস্তার ধুলোবালিতে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় জমিতে ফসল ও এলাকার ফলদ গাছের উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

 

পটুয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, অচিরেই অভিযান চালানো হবে।

 

অবৈধভাবে ইট প্রস্তুতকারী ভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন বলেন, ভাটা মালিকদের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ১ সপ্তাহের সময় দিয়েছি। বৈধ কাগজপত্র না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঠ পোড়ানোরও সুযোগ নেই।

 

এ বিষয়েও ব্যবস্থা নিব।

 

ভোরের আকাশ/নি