logo
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৩ ১৪:১৮
জাল ফেলা নিষেধ: চাল পায় না সব জেলে
বরগুনা প্রতিনিধি

জাল ফেলা নিষেধ: চাল পায় না সব জেলে

জাল বুনে অলস সময় পাড় করছেন জেলেরা

ইলিশ রক্ষায় মার্চ ও এপ্রিলে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদীর প্রায় ২৯০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে সব ধরনের জেলের জাল ফেলা নিষেধ। কর্মহীন এই সময়ে জেলেদের পরিবার নিয়ে চলার জন্য সরকারিভাবে চাল সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু সেই সহায়তা পায় অর্ধেক জেলে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা বাকি অর্ধেক সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে।

 

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারা সহায়তা পাবেন আর কারা পাবেন না এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। কোথাও জেলেদের ‘আর্থিক অবস্থা’ এবং ‘বিকল্প পেশা’ বিবেচনায়, কোথাও তালিকার ক্রমানুসারে; আবার কোথাও নিবন্ধিত জেলেদের ইউনিয়ন কমিটি, জনপ্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদ থেকে নিজেদের মতো করে এটি নির্ধারণ করে দেয়।

 

জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, চাল বরাদ্দে সরকারের নীতিমালা না থাকায় অনেক জেলেই এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, বিভাগে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪ লাখ এক হাজার ৮৮। এর মধ্যে জাটকা ও ইলিশ শিকারের জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১১৯। বাকি প্রায় ৫৭ হাজার ইলিশ ব্যতিত ছোট-বড় মাছ ধরার জেলে। তাদের মধ্যে চাল সহায়তা পায় ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৭ জন। বাকি প্রায় ২ লাখ ইলিশ ও সাধারণ জেলে এই সহায়তার বাইরে থাকে।

 

নভেম্বর থেকে জুন এই ৮ মাস নদীতে জাটকা (যেসব ইলিশ ১০ ইঞ্চির নিচে) ধরা নিষেধ। আর মার্চ ও এপ্রিল ২ মাস অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এজন্য গড়ে চার মাস জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। এ বছর এই চালের পরিমাণ বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮২৯ দশমিক ৯২ টন।

 

বরিশাল জেলার গজারিয়া, কালাবদর ও মেঘনা নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকা অভয়াশ্রম। সেখানে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। জেলায় মোট জেলে রয়েছে ৮৬ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে সহায়তা পেয়েছে ৪৩ হাজার ২৬৭ জন জেলে। তাদের মাঝে ৬ হাজার ৯২২ দশমিক ৭২ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কীভাবে এই বরাদ্দ দেয়া হয় জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, সব জেলেরা দরিদ্র নয়।

 

তাদের মধ্যে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জেলেও রয়েছে। সহায়তার চাল কারা পাবে, তা বাছাই করতে উপজেলা ভিত্তিক কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি তালিকা তৈরি করে। যাদের প্রয়োজন বেশি তাদেরই সহায়তার আওতায় আনা হয়।

 

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ৪০ কেজি করে চাল সব জেলে পান না। অভয়াশ্রমে মাছ শিকার নিষিদ্ধ সময়ে কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। জাটকা সংরক্ষণ সহায়তার চাল যারা পান না তাদের অভয়াশ্রমে শিকার নিষিদ্ধ সময়ে সহায়তা দেয়া উচিত। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বরিশাল সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০ তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে।

 

এর মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন সহায়তা পাচ্ছে। সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জীব সন্যামত বলেন, চার মাসের মধ্যে ২ মাস করে ভাগ করে ৪ হাজার ৭০০ জনকে চাল দেয়া হচ্ছে। এভাবে সবাইকে সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

 

জেলেদের মা ইলিশ সংরক্ষণ ও সমুদ্রে শিকার নিষিদ্ধ সময়েও সহায়তা দেয়া হয়। তাই ভাগ করে দেয়ায় কোনো সমস্যা হয় না। বরিশালের হিজলা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২০ হাজার। নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে আনুমানিক অন্তত হাজার তিনেক। কিন্তু জাটকা শিকার নিষিদ্ধ সময়ের জন্য চাল সহায়তা পাচ্ছে ১২ হাজার জেলে। বাকি প্রায় ৮ হাজার জেলে সহায়তার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

 

হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এমএম পারভেজ বলেন, আমাদের চেষ্টা শতভাগ জেলে সহায়তার আওতায় আসুক। কিন্তু সবকিছু তো চাইলেই হবে না। সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শিকার নিষিদ্ধ সময় ছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের সহায়তা করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ সময়ে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বকনা বাছুর দেয়াসহ বিভিন্ন সময়ে সহায়তা দেয়া হয়।

 

জেলেদের সচেতন করার সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। মাছের উৎপাদন বাড়লে জেলেদের লাভ। সেই বিষয়টি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ সময়ে জাল ফেলা ও মাছ শিকার বন্ধে সরকার সফল হয়েছে জানিয়ে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এ কারণেই তো বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।

 

মৎস্য বিভাগ জানায়, জাল ফেলা নিষিদ্ধ নদীপথ সবচেয়ে বেশি ভোলা জেলায়। সেখানে রয়েছে ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার। এ ছাড়া ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি জেলে রয়েছে ভোলা জেলায়।

 

সেখানে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে ৮৯ হাজার। প্রায় ৬০ হাজার জেলে সেখানে সহায়তার বাইরে। কেন এই বিপুল সংখ্যক জেলে সহায়তার বাইরে রয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদ উল্লাহ বলেন, সরকার মনে করে সব জেলেই মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল নয়। এদের মধ্যে অনেকে কৃষিকাজ ও ছোটখাট ব্যবসা করেন।

 

কেউ আবার অটোরিকশা বা পরিবহন চালান। তাই সব জেলের জন্য বরাদ্দ দেয়নি। তবে সবার জন্য বরাদ্দের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের সুপারিশ রয়েছে জানিয়ে এমদাদ উল্লাহ বলেন, সব জেলের মধ্যে কাদের বিকল্প পেশা আছে বা কাদের নেই এটা নিরূপণের কোনো নীতিমালা নেই।

 

না থাকার কারণে সাধারণত জেলে তালিকার প্রথম থেকে যাদের নাম দেয়া আছে তারা সহায়তা পান।

 

ভোরের আকাশ/নি