এ বছর খুলনা বিভাগে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে অন্য বছরের চেয়ে বেশি। কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর শতভাগ পূরণ হতে যাচ্ছে। মাঠজুড়ে দেখা মিলছে সবুজের সমারোহ। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে তত দূরই দেখা মিলছে সবুজ আর সবুজ। ইতোমধ্যে কৃষক দিনরাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চারা গাছে পরিবর্তন এনেছে, অনেক আগে হতেই শুরু হয়েছে স্তর বিন্যাস। কৃষকের বোরো ধানের ক্ষেতে কুশি (চারা গাছের পরবর্তী অবস্থান), কাইচথোড়, থোড়, ফুলের দেখা মিলছে।
দিনভর চলছে পুরো মাত্রায় পরিচর্যার কাজ। কীটনাশক প্রয়োগ, সার ছিটানো, আগাছা পরিষ্কারসহ নানাবিধ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। যুগের পর যুগ ধরে এই অঞ্চলের চাষিরা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জীবন-জীবিকার যুদ্ধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা অনাবৃষ্টি, কুয়াশা, পোকামাড়কের আক্রমণ বিবিধ প্রতিক‚লতা মাড়িয়ে সারা বছর ধরে নানামুখী কৃষির চাষাবাদ অব্যহত রেখে চলেছে তারা।
বোরো চাষে পানির বিকল্প হিসেবে পরিপূরক সেচের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকেরা আবাদ সম্পন্ন করেছে। কঠোর পরিশ্রমে বোরো ধানে চারিদিকে সবুজের অরণ্য করে তুলতে খুলনাঞ্চলের চলছে বোরো আবাদেও মহাকর্মযজ্ঞ। এখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা প্রতিক‚লতা সামনে না আসলে এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চলের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনসহ দায়িত্বরতদের দেয়া তথ্য মতে, খুলনা অঞ্চলের অধিভুক্ত রয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার বারো ধান (হাইব্রিড, উফশী, স্থনীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি। যার মধ্যে খুলনার ৬২৮০০ হেক্টর, বাগেরহাটে ৫৯৬৫০ হেক্টর, সাতক্ষীরাতে ৭৭২৫০ হেক্টর ও নড়াইলে ৫০০০০ হেক্টর জমি।
ইতোমধ্যে এই আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত হয়েছে, যার হার ১০২.৩%। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, আবাদ শেষে খুলনাঞ্চলে বোরো মাঠে ধানের স্তর খুলনায় কুশি ২২৩২৫, কাইচথোড় ২০৫৪৫, থোড় ১৬৫৮৫ হেক্টর, মোট ৬৩৭৯০ হেক্টর। বাগেরহাটে কুশি ২৯২২০, কাইচথোড় ২৪৮৬৯, থোড় ৮০৮০, মোট ৬২১৬৯ হেক্টর। সাতক্ষীরাতে কুশি ৩৫৭৮৭, কাইচথোড় ২৭৮০০, থোড় ১১৯৫৩ এবং ফুল ৩৯৮৬ হেক্টর, মোট ৭৯৫২৬ হেক্টর এবং নড়াইলে কুশি ২৬১৯৮, কাইচথোড় ১৬৯৯৭, থোড় ৬৮৩০ হেক্টর, মোট ৫০০২৫ হেক্টর।
খুলনাঞ্চলে বোরো ধানের স্তর বিন্যাস হয়েছে মোট ২৫৫৫১০ হেক্টও জমিতে। খুলনাঞ্চলের উপজেলা ডুমুরিয়া, দিঘলিয়ারসহ চার জেলার অধিভুক্ত বেশ কয়েকটি উপজেলার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখন তাদের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ক্ষেতের ধানের পরিচচর্যা, আগাছা দমন, কীটনাশক প্রয়োগসহ বহুমুখী কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ওই সকল এলাকার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা জানিয়েছে, কঠোর পরিশ্রমে বোরো ধানে চারিদিকে সবুজের অরণ্যে করে তুলতে তাদের ক্ষেতে বোরো আবাদের শেষে, এখন পরিচর্চা নিয়ে ব্যস্ত। তারা আশাবাদী কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা প্রতিক‚লতা সামনে না আসলে তাদেও কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন।
কৃষক শাহিন জানান, পানির বিকল্প হিসাবে স্বপূরক সেচের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে যথারীতি বোরো আবাদের শেষ করেছি। এখন আবাদ শেষ ধানের পরিচর্যা চলছে। চলছে সার ও কীটনাশ প্রয়োগ। সারসহ কীটনাশক ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি কারণে বোরে চাষে খরচ বেশি হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে চাষাবাদে নানা সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কৃষক তৈয়েবুর কাজী জানান, আমি এবছর আমি ৮বিঘা ব্লক (বোরো) ধানের উফশী ও হাইব্রীড জাতের চাষাবাদ করেছি। ধানে ইতোমধ্যে থোড় এসে গেছে। বর্তমানে পরিচর্চা চলছে। মাজরা পোকা আক্রমন করেছে। নিয়মিত ভাবে কীটনাশক স্প্রে ও সার প্রয়োগ করছি। ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাগন আমাদেও সর্বসময় চাষাবাদে যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আশাবাদী যেমনি আমন ধানের চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, তেমনি সামনে কোনো প্রতিক‚লতা না থাকলে বোরো চাষেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইল জেলা উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, সাধারনত নভেম্বর হতে শুরু হয় বীজতলা প্রস্তুতির কাজ, মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে বোরো ধানের কর্তন শুরু হয়। বর্তমানে কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন ব্লক পর্যায়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শেষে কৃষকেরা এখন ব্যস্ত ধানের পরিচর্চা নিয়ে। ইতোমধ্যে ধানে থোড় এসে গেছে। চলছে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কীটনাশক, ছত্রাক ও সার প্রয়োগ।
আবহাওয়া যদি সবদিক দিয়ে অনুক‚লে থাকে তবে কৃষকরা তাদের কাক্সিক্ষত ফলন ঘরে তুলছে পারবে বলে আমি আশাবাদি। পাশাপাশি উপজেলার কৃষি অফিসেরও বোরো আবাদের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেও বলে আশাবাদি।
নড়াইল জেলা কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুবির কুমার বিশ্বাস বলেন, মো. কালিয়া উপজেলাতে চলতি অর্থবছরে ১৬৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার শতভাগ পূরণ হয়েছে। এখন প্রতিটি বøক পর্যায়ে ইতোমধ্যেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে কীটনাশক, ছত্রাক ও সার প্রয়োগ। আবহাওয়া যদি সবদিক দিয়ে অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবো।
কারিগরি সহয়তা চলমান আছে, এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেও সর্বক্ষণ তদারকিও অব্যাহত আছে। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) জানান, এ বছর খুলনা বিভাগে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হতে যাচ্ছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় আরো বেশি।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোছাদ্দেক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার বারো ধান (হাইব্রিড, উফশী, স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি এবং বোরো ধানের স্তর বিন্যাস হয়েছে মোট ২৫৫৫১০ হেক্টর জমিতে।
ভোরের আকাশ/নি