logo
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২৩ ১০:৩৮
ভবন নির্মাণের অনুমোদনেই শেষ রাজউকের দায়িত্ব
ইমরান খান

ভবন নির্মাণের অনুমোদনেই শেষ রাজউকের দায়িত্ব

ইমরান খান:রাজধানীতে গড়ে ওঠা ভবনগুলোর ভূমিকম্প সহনীয় কিনা অথবা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও সেফ এক্সিট আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তদারকি নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। শুধু তাই নয়, নগরে কতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, সেটিও জানা নেই রাজউকের।

 

ভবনগুলো নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার পর তদারকি না থাকায় রাজধানীর বহুতল ভবনে আগুন, বিস্ফোরণ ও ভূমিকম্পে ফাটল বা হেলে পড়ার ঘটনা বাড়ছেই। নগরবাসী মনে করছেন, সংস্থাটির অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই বাড়ছে আগুনে বিস্ফোরণ ও ভবন ফাটলের ঘটনা।

 

রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) জরিপ অনুযায়ী, সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সাভার উপজেলা, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের আংশিক) প্রায় ২১ লাখ ৪৫ হাজার স্থাপনা আছে। এর মধ্যে কতটি ঝুঁকিপূর্ণ, সেই তালিকা নেই সংস্থাটির কাছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছাড়পত্র নেয়ার ক্ষেত্রে ইমারত মালিক ও নির্মাতাদের নিরুৎসাহিত করেন রাজউকের একশ্রেণির কর্মকর্তা। অনেক ক্ষেত্রে ইমারত মালিক ও নির্মাতারাও জানেন না এসব ছাড়পত্র ভুয়া। অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে তারা এসব নকশা অনুমোদন করিয়ে দেন। অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান আবার অনুমোদনের অতিরিক্ত উচ্চতার ভবনও তৈরি করে।

 

এসব অভিযোগে রাজউকের বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে একটি বহুতল ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখনো বহু মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর রাজউক ওই ভবনের মূল নকশাসহ অন্য নথিপত্র নিজ দপ্তরে খুঁজে পায়নি। তবে পরে তা ভবন মালিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।

 

এ ঘটনার পর গত ১১ মার্চ রাজউকের নগর উন্নয়ন কমিটির জরুরি বৈঠকে ঢাকা শহরের অতিঝুঁকিপূর্ণ ৪২টি ভবন অপসারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে সময় বেঁধে দেয়া হয় ৩ মাস। তবে সহসাই এসব অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা পড়ছে না।

 

ভবন মালিক কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজউকের কয়েক মাস আগে করা জরিপে তাদের রাখা হয়নি। অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর অধিকাংশই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ভাঙার আগে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বর্তমান কার্যক্রম স্থানান্তর করতে বিকল্প জায়গা আর ভাঙতে অর্থ লাগবে।

 

অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মাদরাসা বোর্ডের ভবনও রয়েছে।

 

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইপিডি বলছে, নিয়ন্ত্রণহীণভাবে ভবনের মিশ্র ব্যবহারে জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে। শুক্রবার দুপুরে ‘নগরে নাগরিকদের বসবাস ঝুঁকি ও জীবনের নিরাপত্তা : নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নগর সংস্থাসমূহের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নগর এলাকায় অগ্নিকান্ড, বিস্ফোরণ, বসবাস ঝুঁকির পেছনে নিরাপদ পরিষেবা প্রদানে বিভিন্ন সেবা সংস্থাগুলোর নজরদারির অভাব বহুলাংশে দায়ী।

 

তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগর এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভবনের মিশ্র ব্যবহারের কারণে একই ভবনের বিভিন্ন তলায় রেস্টুরেন্ট, রাসায়নিক বা বিভিন্ন দাহ্য বস্তুর গুদাম, শিল্প-কারখানা ও আবাসিক বসবাস।

 

সব মিলিয়ে যেকোনো মূহূর্তেই যেকোনো ধরনের অগ্নিকান্ডে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ভয়ানক শঙ্কা আছে। জলাশয়-জলভূমি ভরাট করে এবং ইমারত নির্মাণের আইন ও বিধিবিধান উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণ হয়েছে। এসব ভবনে বসবাসকারীরা ভূমিকম্প বা ভূমিধসসহ যেকোনো দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। সরকারি ভবন জরিপ শেষ হলে বেসরকারি ভবনের জরিপ শুরু হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি