logo
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০২৩ ১১:২২
‘হঠাৎ দেওই নাইম্মা মোগো সাড়ে সর্বনাশ করছে’
কাশেম হাওলাদার, বরগুনা

‘হঠাৎ দেওই নাইম্মা মোগো সাড়ে সর্বনাশ করছে’

বরগুনায় ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ ক্ষেতে চাষি

‘কাইলগো বিয়ালে যেইরহম কলসের কান্দায় দেওই বরছে এইরহম আবারো দেওই নামলে তয় মোগো খ্যাতের তরমুজ সব পইচ্যা যাইবে। এই তিনডা মাস দিনেরে দিন রাইতেরে রাইত কইনায়, খালি খ্যাতের পিছে খাটছি। আর কয়ডা দিন গ্যালেও তরমুজ কাইট্টা আডে উডাইতে পারতাম।

 

হঠাৎ দেওই নাইম্মা মোগো সাড়ে সর্বনাশ করছে। এই ক্ষতি ক্যামনে কাডাইয়া উডমু মোরা।’ ভারি বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমার পর বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী এলাকার তরমুজ চাষি ফজলুল হক এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

 

বুধবার বিকেলে বরগুনা সদরের হেউলীবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টানা ভারি বর্ষণে বরগুনায় তরমুজ চাষিদের ক্ষেতে পানি জমেছে। এতে পঁচন ধরার পাশাপাশি তরমুজ পরিপক্ক হওয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

 

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বরগুনাসহ উপকূলে টানা তিন ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয়। এতে জেলার সব তরমুজ ক্ষেতেই পানি জমে যায়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমলে আটঘাঁট বেধে ক্ষেতে নামেন চাষি। সেচপাম্প দিয়ে রাতভরের প্রচেষ্টায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা দূরিকরণের চেষ্টা চালান।

 

তরমুজ চাষি রেজাউল করিম ভোরের আকাশকে বলেন, মুই প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ লাগাইছি। দেওইতে সব খ্যাতই তলাইয়া গ্যাছে। কেবল তরমুজটা পোক্ত অইয়া ওডা শুরু হরছেলে। বেডের মাডি ভিজা, এই তরমুজে পঁচন ধইর‌্যা নষ্ট অইয়া যাইতে। রেজাউল জানান, ভারি বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যেই ক্ষেতের ২৫ ভাগ তরমুজ নষ্ট হয়েছে। আরো দু-একদিন বৃষ্টি থাকলে দুই তৃতীয়াংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। একই অবস্থা এই এলাকার হাজার হাজার চাষির তরমুজ ক্ষেতের।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বরগুনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশাবাদ ছিল হেক্টরপ্রতি ৪০টন তরমুজের ফলন হবে। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা অনুসারে বরগুনায় তরমুজের ফলনও আশানুরুপ হয়েছে এমনই জানিয়েছেন কৃষকরা।

 

বরগুনার সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী, বুড়িরচর, নলটোনা ও সদর উপজেলায় সবেচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে। এছাড়া আমতলী উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে ওইসব এলাকার তরমুজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ভারি বর্ষণে বরগুনার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

 

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্রায় শতকোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি না হলে বেশিরভাগ তরমুজ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

 

আমরা কৃষকদের সেচে সহযোগীতাসহ এ অবস্থায় কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।

 

ভোরের আকাশ/নি