মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে হিজরি ১২ মাসের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদার মাস মাহে রমজান। এটি ফজিলতের মাস, গুনাহ মাফের মাস। মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জনের মৌসুম। ইসলামে প্রথম রমজান কোনটি।
আমরা অনেকেই হয়তো প্রথম রমজানের কথা জানি না। আল্লাহর কাছ থেকে রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম সাধনা বা রাখার বিধানের আদেশ হয় রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর। শাবান মাসে আল্লাহ জানিয়ে দেন, পরের মাসে রোজা রাখতে হবে।
মদিনার অবস্থা তখন একদম ভালো নয়। আওস আর খাজরাজ এ দুই গোত্রের বাস ছিল মদিনায়। ইসলাম আসার পর তাদের বহু বছরের গৃহযুদ্ধ থেমেছে মাত্র। কিন্তু এ গৃহযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় অর্থনীতি। তার ওপর মক্কা থেকে হিজরত করে আসা একদম নিঃস্ব মুসলিমদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে মদিনার। ভয়ংকর অনিশ্চিত একটা সময়।
তার ওপর মক্কার শক্তিশালী এবং সম্পদশালী কুরাইশদের হুমকি। এ অবস্থায়ই মুসলিমদের জীবনের প্রথম সিয়াম সাধনার রমজান এলো। ওই রমজানেই সংঘটিত হলো কুরাইশদের সঙ্গে প্রথম যুদ্ধ বদরের যুদ্ধ। ইসলামে প্রথম রমজানও ছিল এক ভীষণ রকম সংগ্রামের মাস অর্থনৈতিক দুর্যোগ, নতুন একটা জাতির অনিশ্চিত যাত্রা, আর এক প্রবল পরাক্রমশালী শত্রুতার বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ।
হাজার বছরের পরিক্রমায় আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম রমজানের সত্যিকার স্পিরিট। রমজান ইফতার পার্ট আর উৎসবের মাস তো নয়। এ মাস আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস, যেন আমরা মুত্তাকি হতে পারি। রমজান কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস। আল্লাহ এভাবেই রমজানের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন। সেই প্রথম রমজানের মুসলিমদের মতো পরিমিত খাওয়া, সাধারণ জীবন আর শুধুই ইবাদতের মাস রমজান।
অফিসের ব্যস্ততা ছিল না, শপিং আর ইফতার পার্টির চাপ ছিল না, সামাজিকতার বাহুল্য ছিল না। শুধুই ছিল প্রশান্ত চিত্তে মহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া যোগাযোগ নতুন করে তৈরি করার সুযোগ। সেই প্রথম রমজানের মতো ভয়ংকর অনিশ্চিত সময়ে আল্লাহর রহমতে শান্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ।
এ অসাধারণ রমজানকে স্বাগত জানানোর মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার সময় ছিল এ কয়দিন। আমাদের অতীতের সব সীমালঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরির নতুন পৃষ্ঠা এ রমজান। দ্বিতীয় হিজরির সেই প্রথম রমজানের মতো আসুন এ রমজানকে আমাদের তাকওয়া অর্জনের উপলক্ষ্য বানিয়ে ফেলি।
মহান আল্লাহ তায়ালা এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অসাধারণ এক সুযোগ দিয়েছেন।
আসুন, প্রায় ১৪৫০ বছর আগের সেই প্রথম রমজানকেই আবার নিয়ে আসি এবার আমাদের জীবনে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানে আমাদের সব ধরনের গুনা মাফ করার সুযোগ দিয়েছেন আর আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগাব, ইনশাআল্লাহ।
ভোরের আকাশ/নি