logo
আপডেট : ২৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:২৯
ধলেশ্বরী নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল
বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ

ধলেশ্বরী নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল

মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী খননের দুই বছরেই শুকিয়ে গেছে

মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী খননের দুই বছরেই শুকিয়ে ঠনঠনে হয়ে গেছে। চাষ হচ্ছে ধান ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নামের মহাপরিকল্পনার আওতায় মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী খনন হয়েছে বছর দুই।

 

অথচ সেই নদী এখন পানিশূন্য। নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। স্থানীয়দের অভিযোগ নদী খননের নামে মাটি বাণিজ্য হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

নদী ভাঙন ,বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ৬টি লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ মহাপরিকল্পনা একনেকে পাশ হয় ২০১৮ সালে। এই পরিকল্পনার আাওতায় ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল, ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

কালিগঙ্গ নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখ সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে সিংগাইর উপজেলার ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৫.৫০ কিলোমিটার নদীখনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচটি প্যাকেজে এই খনন কর্মসূচির চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

 

কাজ শেষের সময় ধরা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস। তবে এক বছর সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ হয় গত ২০২১ সালের শেষ দিকে। পাঁচটি প্যাকেজের ১নং বা প্রথম প্যাকেজটি শুরু হয়ে তিল্লি মুখ থেকে জান্না পর্যন্ত ১০.২০ কিলোমিটার অংশে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এই অংশে কয়েকটা ডোবার মতো থাকলেও বেশির ভাগেই কোন পানি নেই, ধুধু বালুচর। মানুষের পায়ে হাটা পথের দাগ। অনেক স্থানে চাষ হয়েছে ধান ও ভুট্টার। নদীর অনেক যায়গায় দেখা গেল মাটি খুড়ে অস্থায়ী কুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। মাস্তারঘাট এলাকায় নদীর ওপরে ব্রিজের নিচে দেখা গেল হাঁটু পানিতে দুই তিনটি ছোট নৌকা অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায়।

 

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যেখানে কালিগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। যাকে তিল্লি মুখ নামে অবহিত করা হয়। দেখা গেল তিল্লি মুখে বিরাট চর পড়ে দুই নদীকে বিভক্ত করে ফেলেছে। কালিগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও ধলেশ্বরী নদীতে কোনো প্রবাহ নেই।

 

স্থানীয়রা জানালেন, তিল্লি মুখ গত প্রায় দশ বছর ধরে বন্ধ ছিল। বর্ষার এক দুই মাস পানি প্রবাহ থাকত। সেভাবে বর্ষা না হলে কোনো কোনো বছর কালিগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরীতে পানি ঢুকতে পারত না। দুই বছর আগে তিল্লি মুখসহ পুরো নদীতেই বেশ তোড়জোড় করে মাটি কাটা শুরু হয়। শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি হয়েছে।

 

এক পর্যায়ে তিল্লি মুখ দিয়ে পানিও ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু গত বছর বর্ষার সময় আবার পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এখন সেখানে বিশাল চর। যে কারণে ধলেশ্বরী নদী খনন করলেও পানি থাকে না।

 

তিল্লি গ্রামের হায়দার আলীর বলেন, তিল্লি মুখে যথেষ্ট গভীর করে খনন না করার কারণে চর পড়েছে। যদি কালিগঙ্গার গভীরতায় ধলেশ্বরী গভীর করে খনন করা হতো তা হলে এত দ্রুত বন্ধ হয়ে যেত না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নদী খননে মাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হলেও আসল কাজ কিছুই হয়নি।

 

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা দীপক ঘোষ বলেন, কেবল তিল্লি থেকে জান্না পর্যন্তই নয় প্রকল্পের পুরো ৪৫ কিলোমিটারের অবস্থাই প্রায় এক রকম। কিছু কিছু এলাকায় পানি থাকলেও তিল্লি মুখ বন্ধ থাকায় পুরো নদীতে কোনো প্রবাহ নেই। এটি এখন কার্যত একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দীপক ঘোষ।

 

মানিকগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন তিল্লি মুখে চর পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নদীতে প্রবাহ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমান শুস্ক মৌসুমে এমন নদীতে পানি প্রবাহ রাখা একটি কঠিন ব্যাপার।

 

তিনি আরও বলেন, সারাবছর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে প্রতি বছরই কিছু কিছু খনন করতে হবে। খননের পর ইতিমধ্যে দুই বছর পার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুনরায় খননের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি