logo
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:১২
বিএনপিকে ইসির চিঠি: সংলাপ না আলোচনা
শাহীন রহমান

বিএনপিকে ইসির চিঠি: সংলাপ না আলোচনা

শাহীন রহমান: গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে অংশ নিতে বিএনপিকে চিঠি দেয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি।

 

শুধু বিএনপি নয়, সমমনা আর ১৩টি দল ইসির সংলাপের সাড়া দেয়নি। নির্বাচন এগিয়ে আসায় হঠাৎ করেই গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে চিঠি দিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ইসি। আর এ চিঠি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

 

বিতর্কের মধ্যেই মঙ্গলবার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য চিঠি দেয়া হয়নি। আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

ইসির চিঠির আনুষ্ঠানিক জবাব বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। তবে গণমাধ্যমে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে এ আমন্ত্রণকে ‘সরকারের নতুন কৌশল’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এখনো সংলাপে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।

 

তবে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে বলে দলটি সূত্রে জানা গেছে। তবে ইসির চিঠিকে বিএনপি সরকারের নতুন ক‚টকৈৗশল হিসেবে মনে করলেও নির্বাচন কমিশন বলছে চিঠির পেছনে সরকারের কৌশল নেই। যে কৌশল রয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনের।

 

এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো সরকারের কোনো কূটকৌশলের অংশ নয়, সরকারের সংশ্লেষ নেই। কূটকৌশল হলে সেটা ইসির হতে পারে, সরকারের নয়। সরকারের পরামর্শেও চিঠি দেয়া হয়নি। ইসি কোনো কূটকৌশল থেকে এ চিঠি দেয়নি।

 

তবে ইসির চিঠিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করা হলেও বিএনপি সন্দেহ দূর হয়নি। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণের বিষয়েও এ রিপোর্ট খেলা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। জানা গেছে, দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সবসময়ই অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে আসছে।

 

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। সরকারের বাইরে গিয়ে তো নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। বিএনপির দাবি একটাই, আর সেটা হলো নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কোনো দলের অধীনে নির্বাচনে তারা যাবেন না। সেই সমাধান তো এ কমিশন দিতে পারবে না, তাহলে তাদের সঙ্গে সংলাপ করে কী লাভ হবে?

 

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি আরো বলেন, চিঠি নিয়ে যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, সেটা যেন নিরসন হয়। চিঠি কমিশন থেকে দেয়া হয়েছে। সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী নয়। আমরা ব্যথিত হই, যখন বলা হয়, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি, আজ্ঞা বহন করিনি। নির্বাচন বিষয় নিয়ে আলাপ করে আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।

 

বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এখনো আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বিএনপির যদি কোনো কৌশল থাকে, তার ওপর ইসির কোনো মন্তব্য থাকবে না। তারপরও আমরা আলোচনা করতে চাই আপনাদের সঙ্গে। ফল ইতিবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। প্রয়াস থাকবে। প্রয়াস গ্রহণ করতে বাধা থাকা উচিত নয়। মূল জিনিসটা হলো, আমরা কিন্তু সংলাপে আহব্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক।

 

আমরা কোনোভাবেই ওনাদের সংলাপে ডাকিনি। সুস্পষ্টভাবে বলেছি, আনুষ্ঠানিক না হলেও, আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ; অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহব্বান করেছি। তবে সংলাপের জন্য বিএনপিবে চিঠি দেয়া হয়নি সিইসি এ কথা বললেও বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কথা জানিয়ে গত ২৩ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছিলেন, সিইসির দপ্তর থেকে বিএনপি মহাসচিবকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো সংলাপেই বিএনপি যায়নি। তাদের বৈঠকে ডাকার ব্যাখ্যায় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান সেদিন বলেন, বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দলকে আগের সংলাপগুলোয় ইসি পায়নি, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

 

শনিবারও তিনি এ বিষয়ে বলেন বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে হয়নি। কমিশন সার্বিকভাবে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগেও বিএনপিকে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে।

 

ইসি মনে করে, বিএনপির মতো নিবন্ধিত অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হতেই পারে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনানুষ্ঠানিকপত্র দিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে।

 

আনুষ্ঠানিক নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অন্তত আপনার অংশগ্রহণ করতে পারেন। একটি চিঠি দিয়েছিলাম বৃহস্পতিবার শেষ বেলায়। আমার মনে হয়, চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনো জবাব আসেনি। ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন। ইসি একেবারে প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে।

 

গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে, দলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রয়োজন বলে ইসি মনে করে। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই মুখ্য। বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন কখনো সম্ভব হয় না। দলগুলোর চর্চার মাধ্যমে তা বিকশিত হোক, গণতান্ত্রিক সরকার সংহত হোক এটা চেষ্টা করা হয়েছে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, যেকোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। আশা করি, যেহেতু মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছি। যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসে, সেটাই কাক্সিক্ষত। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।

 

বিএনপি যদি আসে, তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেই প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনারা কী বলবেন, আমরা কী বলব, আগাম কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। বিএনপি যদি আলোচনার জন্যে এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তারপরও বসতে চাই।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে, সব কমিশনারই জানেন। সিইসির পত্র নয়, সিইসি লিখেছেন, কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেয়া কিনা, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই।

 

আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা।

 

ভোরের আকাশ/নি