logo
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২৩ ১২:০৯
বালু না থাকলেও ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
বালু উত্তোলনের নামে চলছে পাহাড় কাটার মহা ধ্বংসযজ্ঞ, জনমনে ক্ষোভ
এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

বালু উত্তোলনের নামে চলছে পাহাড় কাটার মহা ধ্বংসযজ্ঞ, জনমনে ক্ষোভ

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীতে বালি উত্তোলনের নামে চলছে পাহাড় কাটার মহা ধ্বংসযজ্ঞ

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীতে বালু উত্তোলনের নামে চলছে পাহাড় কাটার মহা ধ্বংসযজ্ঞ। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ওই খালে বালু উত্তোলনের নামে পাহাড় কাটার ইজারা বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি পরিবেশবাদীদের।

 

ইতিপূর্বে স্থানীয় সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে থাইংখালী খাল ইজারা বন্ধ হলে ও বালু উত্তোলনের জন্য কেন ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। কারণ এ দুটি খালে কোনো বালু নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দীন চৌধুরী ও উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলমসহ এলাকাবাসী।

 

গত দুই বছরে পালংখালী ও থাইংখালী খালের বালি উত্তোলনের নামে ৫৭টি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে খালের বালু উত্তোলনকারীরা। এদিকে পালংখালী খালে কোনো বালি না থাকলেও কেন বালি ইজারার নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকার সচেতন মহল। তারা পালংখালী খালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

 

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমদ জানান, পালংখালী খাল বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হলে যেসব পাহাড় অবশিষ্ট আছে ভবিষ্যতে পাহাড় বলতে আর কিছুই থাকবে না। তাই অবিলম্বে পালংখালী খাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি সর্বমহলের। এমনকি থাইংখালী খালের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

অন্যদিকে পালংখালী খালকে বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা না দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছেন। থাইংখালী ও পালংখালী খালীতে গত বছর বালি উত্তোলনের নামে শত শত অবৈধ ট্রাক, মিনিট্রাক ও ডাম্পার দিয়ে পাহাড় কেটে বিরাণভূমি বানিয়েছিল বালিখেকোরা।

 

এ ব্যাপারে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলায় প্রায় পাঁচশজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। এ সময় জব্দ করা হয় মাটি কাটার স্কেভেটর, বালিভর্তি ডাম্পার এবং মিনিট্রাকসহ বালি ও মাটি কাটার সরঞ্জামাদি। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলাও করেছে এসব পাহাড়খেকো বালি সিন্ডিকেট।

 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, যেসব খাল ইজারা দেয়ার মতো মনে হয়েছে মূলত: সেসব খালের বালি ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি অনুসন্ধান করে দেখা যায় বালি নেই খালে, বালি উত্তোলনের নামে পাহাড় কাটা হতে পারে তাহলে সেই খালের ইজারা বন্ধ রাখা হবে।

 

এমনকি খালের বালি উত্তোলনের ইজারা নিয়ে পাহাড় কাটা হলে সাথে সাথে ইজারা বাতিল করা হবে। এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী থাইংখালী খালের ন্যায়, পালংখালী খালকে ইজারা না দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

 

এ ছাড়া পরিবেশবাদী সংগঠন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, বেলা ও গ্রিন কক্সবাজার যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, পালংখালী খালে কোনো বালি নেই। বালিশূন্য এই খাল ইজারা দেয়া হলে বালুখেকোরা অতীতের মতো পাহাড়ে পাইপ দিয়ে খাল থেকে পানি তুলে শরবত বানিয়ে বিশেষ কায়দায় বালি বের করে পাহাড় ধ্বংস করবে।

 

তাই পালংখালী খালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে এলাকায় প্রতিবাদ সভা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন স্থানীয়রা।

 

কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন, বাপার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, সহসভাপতি এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, প্রাণ প্রকৃতি, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পালংখালী খালে বালি উত্তোলনের নামে ইজারা বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হোক।

 

ভোরের আকাশ/নি