মোতাহার হোসেন: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি, পদোন্নতিকে ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এবং দালাল চক্রের বলয় ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক কর্মস্থলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বদলি করা হবে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্কুলে অনিয়মিত আগমন, শিক্ষার্থীদের যথাযথ পাঠদানে ব্যর্থ, অযোগ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। নতুন নিয়মে একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো একটি কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। একই নিয়ম চালু থাকবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, অনিয়মিত স্কুলে আসা, পাঠদানে অমনযোগী, অনিয়মে যুক্ত রয়েছেন এমন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার। এ ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় শাস্তি পেয়েছেন সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে যারা ইতোমধ্যে দুই থেকে তিন বছর অতিক্রম করেছেন, তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় এ তালিকা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বদলি হবে প্রথম ধাপে। পর্যায়ক্রমে তালিকা অনুযায়ী বদলি হবে ধাপে ধাপে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বদলি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি নতুন কিছু নয়। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের নিয়মিত বদলি করা হয়। একটি রুটিন কাজ। সেটি আগেও হয়েছে, আগামীতেও হবে। তবে কোথাও কোথাও সেটি নানা কারণে মানা হচ্ছে না। আমাদের এখানে যেসব কর্মকর্তার তিন বছর অতিক্রম হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে একই দপ্তর বা শাখায় রয়েছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি গত সমন্বয় সভায় নতুন করে আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপ-আনুষ্ঠানিক ব্যুরোসহ প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন শাখা-উপশাখায় বড় ধরনের তদবিরের মাধ্যমে বদলি হয়েছেন কর্মকর্তারা। ঢাকার এসব প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে যুগের পর যুগ শিকড় আঁকড়ে পড়ে থাকছেন। একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে থাকায় এসব কর্মকর্তা জড়াচ্ছেন নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে। কেউ কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করে পাহাড়সম অর্থ উপার্জন করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এ কারণেই প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন অধিদপ্তরসমূহে এসব কর্মকর্তার বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য সেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা থেকেই পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তাদের বদলির নির্দেশনা জারি করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা একই স্থানে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দপ্তরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব), অর্থ উন্নয়ন বিভাগের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক, পলিসি ও অপারেশনের উপ-পরিচালক, প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক, একই পদের আরেক কর্মচারী, অর্থ বিভাগে, অর্থ বিভাগে (অডিট) সহকারী পরিচালক, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এই শাখার প্রায় এক ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অবশ্য ইতোমধ্যে রুমানা সাবির, জান্নাতুল ফেরদৌস (সংযুক্ত), মো. মোশারফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডিপিইর আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় সংক্রান্ত কাজ করে প্রকিউরমেন্ট বিভাগে ২০০৬ সালের মে মাস থেকে একই চেয়ারে রয়েছেন। এ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে এ সংস্থায় কাজ করছেন। সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে দুইজন ২০০৮ ও ২০০৯ সাল থেকে আছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তর/সংস্থায় কর্মরত উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ সব প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের তিন বছরের অধিককাল বিবেচনায় বদলি/দপ্তর পরিবর্তন করা হবে। চলতি মাসের সমন্বয় সভায় তিন বছর অতিক্রম হওয়া প্রাথমিকের সব দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের তালিকা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা সেসব কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছেন।
ভোরের আকাশ/আসা