শাহীন রহমান: গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ১৩৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পায় ইসির তদন্ত কমিটি। সিদ্ধান্ত হয় এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার। সে অনুযায়ী গত ২০ ডিসেম্বর নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় ইসি। চিঠিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়।
কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেছে ২ মাস হলো। নির্বাচন কমিশন আজো জানে না, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা অদৌ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা। যদিও সিইসি সম্প্রতি জানিয়েছেন, ১৩৩ কর্মকর্তার মধ্যে ৪০ জনের বিষয়ে জবাব পাওয়া গেছে।
তবে কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে এখনো ইসিকে অবহিত করেনি। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে ফের ইসি থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সিইসি ৪০ জনের জবাব পাওয়া কথা বললেও বৃহস্পতিবার ইসি থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, সেখানে ৪০ জনের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা ছিল ইসির সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।
তারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার ইসির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারলে মাঠ প্রশাসনে ভুল বার্তা যাবে। তখন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, যে চিঠিগুলো দিয়েছিলাম, সেই চিঠিগুলো ১৩৩টির মতো হবে, ৪০টির মতো জবাব পেয়েছি তারা (মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর) অ্যাকশন নিচ্ছে। পদ্ধতিগতভাবে দীর্ঘসূত্রতা হলেও ব্যবস্থা নেয়ার অগ্রগতি জানতে আবার চিঠি দেয়া হবে।
তিনি জানান, আমরা যখন চিঠি লিখি, ডিপার্টমেন্টের কিছু রুলস মেনে চলতে হয়। পদ্ধতিগত সেসব কারণেই হয়তো ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং প্রসিডিংসটা চলছে। অনেকের কাছ থেকে আমরা জবাব পাইনি। আমরা দ্বিতীয়বার চিঠি দেব। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অথবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের কাছে কিনা, এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের জ্ঞাত করা হবে।
যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তার মধ্যে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাও ছিলেন। যিনি ওই নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ইসি নিজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) শাস্তি হিসেবে গাইবান্ধা থেকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পরিচালক করা হয়েছে।
এটা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিনা, সে বিষয়ে সিইসি বলেন, যেই দায়িত্বে তিনি (রিটার্নিং কর্মকর্তা) ব্যর্থ হয়েছেন, সেই দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে বা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এটা প্রমোশন নয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম, তাকে তার দায়িত্ব থেকে তুলে নিয়ে আসা।
গত বছর ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
তদন্ত কমিটি ছয় শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়ে প্রতিবেদন দেয়, যার ভিত্তিতে ১৩৩ কর্মকর্তার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে গত ২০ ডিসেম্বর চিঠি দেয় ইসি। ইসি রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া অন্য যাদের বিরুদ্ধে ইসি ব্যবস্থা নিতে নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১২৬ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের ৫ উপপরিদর্শক (এসআই)।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১-এর বিধান অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার কথাও জানায় ইসি। গাইবান্ধায় উপনির্বাচনে ভোট শুরুর পরই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ইসি থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয় বারবার। কিন্তু প্রিসাইডিং অফিসার থেকে মাঠ প্রশাসন কেউ ইসির নির্দেশ আমলে নেয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়েই নির্বাচন ভবনে বসেই ভোট বন্ধ করতে হয় ইসির।
গাইবান্ধায় নির্বাচন বন্ধের পর অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করার ইসি মো. আলমগীর বলেছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না নির্বাচন কমিশন। অপরাধ প্রমাণ হলে চাকরিচ্যুত থেকে বরখাস্ত করার মতো শাস্তি গ্রহণ করা হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে প্রথমে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহব্বান জানানো হবে।
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যদি ইসির কথা না শোনে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখার পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। তারা কথা শোনেনি। তাদের বামে যেতে বলা হয়েছে। ডানে গেছেন। ডানে যখন যেতে বলা হয়েছে বামে গেছেন।
এভাবে ইসির নির্দেশনা অমান্য করা অপরাধ। গাইবান্ধা উপনির্বাচন বন্ধের পর অনিয়ম তদন্তের ইসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শুধু ৫১ কেন্দ্রে নয়, নির্বাচনের অধিকাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। গত বছর ১৫ নবেম্বর ইসিতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় শুধু ভোট বন্ধ হওয়া ৫১টি কেন্দ্র নয়, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের বাকি ভোটকেন্দ্রের প্রায় সবগুলোর চিত্রও একই ধরনের।
এসব কেন্দ্রে অনাকাক্সিক্ষত জনগণের প্রবেশ, ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধ্যকরা বা প্রভাবিত করা, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষের ছবি ধারণসহ নানা অনিয়মের তথ্য পেয়েছে। ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি বাকি ৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭টির সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব অনিয়ম পেয়েছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বেশিরভাগই প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ কর্মকর্তাদের ১২৫ জনের বিরুদ্ধে একই আইনানুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় ইসি। এছাড়া একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি পুলিশের পাঁচজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে, এডিসি ও একজন নির্বাহী হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। এসব কর্মকর্তাদের শাস্তিমূল ব্যবস্থা নিতে ইসির এক নির্দেশনা বলা হয়, তদন্তে প্রমাণিত যে ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের নিয়ন্ত্রণকারী বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করতে হবে।
কেন্দ্র নম্বর ৯৪-এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক উদয়ন ডিগ্রি কলেজ কে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বলা হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে।
একইভাবে ওই নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব থাকা ২নং কেন্দের এসআই তরুণ কুমার, ৫৪নং কেন্দ্রের এসআই মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, ৫৯নং কেন্দ্রের মো. আনিছুর রহমান, ৬২নং কেন্দ্রের রঞ্জন বর্মণ, ১০৫নং কেন্দ্রের মো. দুলাল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরণের কারণে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার কথা বলা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়। এ তালিকায় একজন সহকারী কমিশনার (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল নম্বর ০১৭২৬৩৪১৩৭৭। তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয় নাই) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে চিঠি দেয়ার জন্য বলা হয় ইসি থেকে।
এ নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন ইসি নিজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসির বাইরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানে না ইসি।
তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ইসিকে অবহিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে না জানালে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল।
তবে ইসির বেঁধে দেয়া সময় দুই মাস আগে পার হলেও ইসিকে এখনো অবহিত করা হয়নি। যার কারণে বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৫ দিনের সময় দিয়ে আবারো তাগিদ দিয়েছে। তবে সিইসি ৪০টির মতো জবাব পাওয়ার দাবি করলেও বৃহস্পতিবার পাঠানো তাগিদ পত্রে সেসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। বরং ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত কোনো চিঠি তারা এখনো পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার তাগাদা পত্র দেয়া হয়েছে। তাদের ১৫ দিনের মধ্যে এটা জানাতে বলা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি