logo
আপডেট : ১ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১৭
ফের জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় বিএনপি, টার্গেট আগামী নির্বাচন
এম সাইফুল ইসলাম

ফের জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় বিএনপি, টার্গেট আগামী নির্বাচন

এম সাইফুল ইসলাম: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের কূটনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় বিএনপি। দলটির নানামুখী কূটনীতিক তৎপরতা এখন দৃশ্যমান। একদিকে পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা; অন্যদিকে ভারতকে আস্থায় আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি নেতারা।

 

আগামী ঈদের পর দলটির ৭ নেতার ভারত সফরের খবরটি এখন আলোচনায়। পাশাপাশি ঈদের পরপরই পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের চেষ্টা চলছে। এছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক কর্মকান্ডের নজরও বাড়িয়েছে দলটি।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা জনগণের ওপর আস্থাশীল। তবে আগামী নির্বাচনে যেন জনগণ স্বাধীনভাবে মতামত প্রতিফলন করতে পারে, সেজন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। সেজন্য বিএনপি কূটনৈতিক অঙ্গনের কর্মকান্ড আগের চেয়ে বেশি। দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে বাইরের গণতান্ত্রিক শক্তির সমর্থন চাওয়া দোষেরও নয় বলে অভিমত তাদের।

 

জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি কয়েক মাস। এরই মধ্যে দেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা মেরুকরণ। আওয়ামী লীগ চায় ক্ষমতা ধরে রাখতে। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতা আসতে চায়। দলটির দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।

 

আর আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বলে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথমুখী। দলটি এখন রাজপথে কর্মসূচি আদায়ের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে কূটনৈতিক সমর্থনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা এখন স্পষ্ট। বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশকে টার্গেট করে এগোচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, চীনকে টার্গেট করে এখন কাজ করছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

 

বিশেষ করে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব এখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে সোচ্চার। গত দুই সংসদ নির্বাচনের ত্রুটি নিয়েও তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে কথা বলছেন।

 

ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে তাদের এ অবস্থান অনেকটাই বিএনপির দাবির সঙ্গে মিলে যায়। এসব দেশের কূটনীতিকদের কাছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে কাজ করছেন বিএনপি নেতারা।

 

পাশাপাশি ত্রুটি পূর্ণ নির্বাচন, কর্মসূচি পালনে সরকারের কঠোরতা ও মানবাধিবকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিকদের নিয়ে জমকালো ইফতার পার্টি করেছে বিএনপি। এতে ২২টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। এর আগে গত ১২ মার্চ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) আটটি দেশের ক‚টনীতিকদের বৈঠক শুরু হয়।

 

ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় ওই বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়। কেন এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না, সেটিও রাষ্ট্রদূতদের পরিষ্কার করেন দলটির প্রতিনিধিরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ এবং মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ওই বৈঠকে অংশ নেন।

 

ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে পর গত ১৬ মার্চ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে তার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন। ওই বৈঠকেও নেতৃত্বে দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ।

 

এ বৈঠকেও আগামী নির্বাচন ও চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা হয় বলে বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপি নেতারা জানান। এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করেন। অর্থাৎ বিএনপির জোর কূটনৈতিক তৎপরতা এখন দৃশ্যমান।

 

এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে ঈদের পর ধারাবাহিতকার অংশ হিসেবে বিএনপি কূটনৈতিক কর্মকান্ড আরো বাড়াবে বলে জানা গেছে। ঈদের পরপরই বিএনপির ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারত সফরে যাবেন বলে ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিএনপি জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

বিষয়টি নিয়ে গত ১৮ মার্চ দৈনিক ভোরের আকাশে ‘ভারতকে আস্থায় আনতে তৎপর বিএনপি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রাশিত হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষায় জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখার আহব্বান জানানো হবে। বর্তমান সরকার আবারো ‘পাতানো নির্বাচন’ আয়োজন করতে চায় বলেও জাতিসংঘকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হবে।

 

জাতিসংঘের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), কমনওয়েলথকেও একই বিষয়ে চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের কৌশলে বিএনপি ঈদের পরপরই কূটনীকিদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করতে ইতোমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন। বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটির নেতারা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ঈদুল আজহার পরও বিএনপি কূটনীতিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছিল।

 

বিএনপির আরো একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে বেড়েছে পশ্চিমা ও তাদের মিত্র দেশগুলোর তৎপরতা বাড়িয়েছে। তাই তাদের আস্থায় আনতে রোজার ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করবেন প্রকাশিত খবরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দলটির এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফেরাতে জনগণের সমর্থনই বড় শক্তি। তবে গণতন্ত্র ফেরাতে বিশ্বের গণতন্ত্রমনা দেশগুলোর একটা ভ‚মিকা থাকে। আমরা সেটিও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রহীন, আমরা তাদের সেটি বোঝানোর চেষ্টা করছি।

 

সম্প্রতি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু আগামী নির্বাচন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশ নেই তা প্রমাণিত। সরকার যে মিথ্যা তথ্য বিভিন্ন স্থানে দেয় আমরা প্রকৃত সত্যটা জানানোর চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে এ সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটিও জানাচ্ছে বিএনপি।

 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পদক ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ নিয়মিত কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। তিনি বলেন, বিএনপি মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। একটি বড় দল হিসেবে আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। সেখানে দেশের গণতন্ত্রহীনতা, গত দুই নির্বাচনে ভোটের নামের প্রহসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসবে এটা খুব স্বাভাবিক।

 

এছাড়া ভারতের ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে আমাদের কোনোদিনও সম্পর্ক খারাপ ছিল না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ বলে প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগ ফায়দা নেয় বলেও দাবি তার।

 

ঈদের পর বিএনপি নেতাদের ভারত সফরের ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু না বললেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের আকাশকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

 

এর বাইরে কিছু বলার মতো অগ্রগতি আমি জানি না।

 

ভোরের আকাশ/নি