logo
আপডেট : ১ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:৩৫
চোখে নামে বৃষ্টি
জোবায়ের রাজু

চোখে নামে বৃষ্টি

পার্কের সবুজ ঘাসের গালিচায় দেড় ঘণ্টা ধরে লিমার অপেক্ষায় বসে আছে নোমান। এই দেড় ঘণ্টায় ফোনে বেশ ক’বার ওদের কথাও হয়েছে। অপেক্ষায় অস্থির হয়ে নোমান বার বার ফোন দেয় লিমাকে। প্রতিবার লিমা আহত গলায় বলে ‘কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।

 

একটি রিকশাও না। ধ্যাত ভাল্লাগছে না।’ লিমার মুখের বুলি শুনে বেশ রাগ হল নোমানের। আজ সত্যি যানবাহন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে আসতে নোমানেরও বেশ ঝাক্কি পোহাতে হয়েছে। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে অবশেষে কাক্সিক্ষত রিকশা পেয়ে এখানে আসতে সক্ষম হয়েছে সে।

 

এখানে আজ আসাটাও জরুরি। নোমানের সঙ্গে আজ জরুরি কথা আছে। আজই দুজনে পরিকল্পনা করবে তারা কি কোর্ট ম্যারেজ করবে, নাকি দুজনে আজ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। বার বার বিয়ে ভেঙে দেয়াটা লিমার জন্যে এখন বড় কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বর্তমানে যেখানে লিমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, বাবা মা এখানেই লিমাকে বিয়ে দিতে চান। কিন্তু আপত্তি লিমার। আপত্তি থাকবেই না বা কেন! নোমানকে যে সে জীবন দিয়ে ভালোবাসে। কোনভাবেই নোমানকে সে হারাতে পারবে না।

 

গতানুগতিক নিয়মে দুজনেরই প্রেম হয়েছে দু বছর আগে। ব্যারিস্টার বাবার একমাত্র মেয়ে লিমার স্বপ্ন পুরুষ হয়ে উঠতে সময় লাগেনি নোমানের। পারিবারিক আর সামাজিক মান মর্যাদায় লিমার পরিবার এগিয়ে থাকলেও নোমানের পরিবার তার বিপরীত। সামান্য এক রিকশাওয়ালার মেধাবী ছাত্র নোমান।

 

কিন্তু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সে লিমার কাছে নিজের পরিচয় গোপন রাখে। লিমা জানে নোমানের বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা। এই শহরে তাদের দুটি ফ্ল্যাট আছে। এসব ভুল আর মিথ্যে সংবাদ লিমার কানে ঢুকিয়ে দিয়েছে স্বয়ং নোমান নিজেই। লিমাও নোমানের সেসব প্রভাবশীলতার গল্প শুনে নোমানদের সেসব ফ্ল্যাটের রানি হয়ে উঠার গোপন স্বপ্ন দেখতে থাকে।

 

আবারো লিমাকে ফোন দেয় নোমান।

 

গাড়ি পেয়েছো?

 

একটা রিকশা পেয়েছি। কিন্তু মেজাজ খারাপ।

 

কেন?

 

আর বলো না। কোথা থেকে যে এই বুড়ো রিকশাওয়ালা এসেছে। গায়ে বল শক্তি নেই। কচ্ছপ গতিতে রিকশা চলছে। তার চেয়ে হেঁটে গেলে এতক্ষণে তোমার কাছে পৌঁছে যেতাম। এই বেটা, আরো জোরে চালাতে পারো না? উফ!

 

যত্তোসব।

 

নোমান শুনতে পাচ্ছে লিমা রিকশাওয়ালাকে অশোভনীয় ভাষায় গালমন্দ করছে। আর দ্রæত গতিতে রিকশা চালাতে তেজি গলায় হুকুম জারি করছে।

 

২. পার্কের মূল গেটের দিকে তাকিয়ে নোমান দেখে নীল শাড়ি পরে লিমা রিকশা থেকে নামছে। কিন্তু রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে তার মাথায় যেনো বাজ পড়লো। এ কাকে দেখছে নোমান! বাবার রিকশায় চড়ে লিমা...?

 

দূর থেকে নোমান দেখছে লিমা তার বাবার সঙ্গে কি নিয়ে যেনো তর্ক করছে। তর্কের এক পর্যায়ে বাবার পকেটে টাকা না কি যেনো ভরে দিয়ে লিমা হনহনিয়ে মূল গেইট ক্রস করে ভেতরের দিকে চলে আসছে। ভাগ্যিস বাবা নোমানকে দেখেনি। আজ ধরা খেলে কি জবাব দিতো লিমাকে।

 

টিস্যু পেপারে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে নোমানের পাশে এসে বসে লিমা। ‘জানো, এই দেশের রিকশাওয়ালাগুলি বড্ড বেয়াদব হয়ে গেছে। সঙ্গে ভাংতি রাখে না। এই বুড়োর কাছেও ভাংতি নেই বলে পুরো এক’শ টাকাই দিতে বাধ্য হয়েছি। এসব ওদের ভং।’

 

লিমার কথাগুলি শুনে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল নোমানের। লিমা জানে না সে কাকে বেয়াদব বলেছে! নোমানের বাবাকে। চোখে পানি চলে এলো নোমানের। এই সমাজে তার বাবাদের মতো রিকশাওয়ালাদের স্থান কোথায়, লিমা দেখিয়ে দিয়েছে।

 

না, নোমান আর তার পরিচয় গোপন রাখবে না। ব্যারিস্টারের এই মেয়েকে বলে দিবে ‘আমি তোমার যোগ্য নই। আমি রিকশাওয়ালার ছেলে, যার রিকশায় চড়ে তুমি এখানে এসেছো, সে আমার বাবা।’

 

নোমান এসব যতই ভাবছে, তার বুকের ভেতরটা ততই চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি