logo
আপডেট : ১ এপ্রিল, ২০২৩ ১৫:৩৬
৭ লাখ ঋণ নিয়ে সৌদি গিয়ে লাশ হলেন রিকশাচালক রৌফ মিয়া
আশরাফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

৭ লাখ ঋণ নিয়ে সৌদি গিয়ে লাশ হলেন রিকশাচালক রৌফ মিয়া

সৌদিতে নিহত রক্কু মিয়া ওরফে মো. রৌফ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইয়ুমপুর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামে। সৌদি আরবে ওমরাহ হজের যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ১৮ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রক্কু মিয়া একজন। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।

 

পরিবারের দাবি, লাশ যেন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রৌফ মিয়া একজন রিকশাচালক ছিলেন। ২ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। একমাত্র কন্যা শিউলি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন।

 

সবার ছোট ছেলে হৃদয় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে এবং নিজে রিকশা চালিয়েও পরিবার নিয়ে চলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল রৌফ মিয়ার। বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জনের চিন্তায় স্থানীয় এনজিও থেকে সুদে ও ধার করে ৭ লাখ টাকা যোগাড় করে ৩ বছর আগে সৌদি আরবে যান।

 

সৌদির দাম্মাম এলাকায় রেস্টুরেন্টে সামান্য বেতনে পরিছন্নকর্মীর কাজ করতেন। ৩ বছর ধরে প্রবাসে থাকলেও এখনো শেষ হয়নি ঋণের বোঝা। তাই যাওয়ার পর আর দেশে আসেননি।

 

২৭ মার্চ বিকেলে ওমরাহ করার উদ্দেশে বাসে মক্কা যাচ্ছিলেন। পথে একটি সেতুতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় বাসটি। যাত্রীবাহী বাসটির ব্রেক কাজ না করায় আসির প্রদেশ ও আবহা শহরের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বাসে আগুন ধরে ২২ জন নিহত হন।

 

এদের ১৮ জনই বাংলাদেশি। রৌফ মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। সেখানকার এক স্বজনের মাধ্যমে তার পরিবার মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। একদিকে প্রবাসে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যু অপরদিকে মাথার ওপর ঋণের বোঝা। এসব চিন্তায় বাকরুদ্ধ পরিবারের মানুষগুলো।

 

মেয়ে শিউলি আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রওয়ানা হওয়ার ১০মিনিট আগে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর থেকে আব্বার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়...।’ নিহতের স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন আমার স্বামী।

 

বিদেশ যাওয়ার সময় যে ঋণ হয়েছিল তার সামান্য শোধ হয়েছে। সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। কীভাবে এই ঋণ শোধ করবো। কীভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে বাঁচবো’। স্বামীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারে প্রতি দাবি জানান তিনি।

 

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল এহসান বলেন, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কসবা উপজেলার রুক্কু মিয়া নামের এক প্রবাসীর নিহতের খবরটি শুনেছি।

 

বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি