পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন পার হয়েছে; সারা দিন পর অফিস শেষ হওয়ায় পেশাজীবী মানুষ বিকেলে বাড়ি ফেরেন। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে। যে যার মতো বাড়ি ফেরায় রাজধানীর অফিস এলাকার মোড়গুলোয় জটলা লাগে। মূল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট সৃষ্টি হয় যানজট।
রোববার রাজধানী ফার্মগেট, মালিবাগ, মগবাজার, সাতরাস্তা, মহাখালী, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, কারওয়ান বাজার, বনানী এলাকায় মোড়ে মোড়ে জটলা ও মূল সড়কে যানজটে পড়েন যাত্রীরা। এ অবস্থায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা দম ফেলার সময় পাননি। সড়কগুলোয় যানজট নিরসনে ট্রাফিক সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের সদস্যরাও।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত সদস্যরা বলছেন, রোজার মাসে প্রায় একই সময়ে সবার অফিস শেষ হয়। তাই অফিস থেকে সবাই একসঙ্গে বের হয়ে পড়েন। সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে।
ফলে সড়কে পরিবহনের চাপ বেড়ে যায়। রাজধানীতে পর্যাপ্ত সড়ক না থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে মূল সড়ক সংযুক্ত মোড়গুলোতেও জটলা লেগে থাকে। তাছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় সড়ক উন্নয়নের কাজও করছে বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা। ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
এতে যানবাহনের চলাচলেও ধীরগতি দেখা যায়। যাত্রী-পথচারী, যানবাহন চালকরা ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না। তাদের ক্ষণে ক্ষণে আইন ভঙ্গের কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়।
কারওয়ানবাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আল-আমীন। তার বাসা নতুনবাজার এলাকায়। রোজায় বিকেল ৩টায় অফিস শেষ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হয়। কিন্তু জ্যামের কারণে সময়মতো বাসায় ফিরতে পারেন না তিনি। দেরি হলে রাস্তার কোথাও দাঁড়িয়ে ইফতার করতে হয়।
তিনি বলেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ যানবাহন রয়েছে, সেগুলো চলাচলের জন্য তো রাস্তা নেই। যানজট নিরসনের জন্য হয় রাস্তা বাড়াতে হবে, নয়তো যানবাহন কমাতে হবে। তা ছাড়া যানজট কমানোর উপায় নেই। অভিযোগ উঠেছে, বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কে গণপরিবহনগুলো কোনো নিয়ম মানছে না। সরেজমিনেও তা-ই দেখা গেছে।
যত্রতত্র পরিবহন থেকে যাত্রী তোলা-নামানো করছেন বাস চালক-হেলপাররা। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্যাসেঞ্জার তোলা-নামানো করা হচ্ছে। একটি বাস আরেকটি বাসকে জায়গা দিতে চায় না। সামনে দুই-তিনটি বাসের জন্য পেছনে দীর্ঘ জট লেগে যাচ্ছে।
রাজধানীতে লেন চালু থাকলেও কোনো চালক তা মানছেন না। দোকান, প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের কারণে ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পথচারীদের বাধ্য রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে। এতে তাদের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, বাস মালিক, চালক, হেলপারদের নৈতিক স্খলনের কারণে সাধারণ মানুষকে ঝক্কি পোহাতে হয়। নৈতিকতা নেই সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সমিতি ও কমিটির। যে কারণে যে যার মতো ইচ্ছা রাস্তা ব্যবহার করছেন। ফুটপাতের জায়গা মেরে খাচ্ছেন।
এসব ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রমজানে যাতে রাজধানীর সড়কগুলোয় যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। রাস্তায় যাতে অবৈধ গাড়ি পার্কিং না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাড়তি ফোর্সও রাখা হয়েছে। রমজানে ঘরমুখো মানুষের কোনো কষ্ট যাতে না হয়, আমরা সে ব্যাপারে সচেষ্ট।
ভোরের আকাশ/নি