logo
আপডেট : ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৩৮
হজ নিবন্ধন
৭ বার সময় বাড়িয়েও কোটা খালি
শাহীন রহমান

৭ বার সময় বাড়িয়েও কোটা খালি

শাহীন রহমান: কোটা পূরণে হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৭ বার। আগামী বুধবার এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ৭ বার বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত কোটা পূরণ হয়নি।

 

হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১৭ জন হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৯৩৭ জন এবং বেসরকারিভাবে এক লাখ ৮ হাজার ৩৮০ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এখনো কোটা পূরণে ৮ হাজার ৮৮১ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি।

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হজের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে হজের জন্য আগ্রহীদের নিবন্ধনই কম দেখা যাচ্ছে। হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিটের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ বা আটাব বলছে, বিমান ভাড়া এত বেশি নির্ধারণ করা এক ধরনের ‘অবিচার’।

 

এর ফলে কয়েক দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক বিমান ভাড়ায় হজ প্যাকেজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ওই দুটি সংগঠনের নেতারা।

 

হজে যেতে এবার শুধু বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। তবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম জানিয়েছেন, চলতি বছরের জন্য ভাড়া প্রথমে তারা দুই লাখ দশ হাজার টাকা প্রস্তাব করলেও পরে হজযাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সেটি কমিয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।

 

গত বছর হজে যেতে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার তা থেকে ৫৮ হাজার টাকা বেশি বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ সমালোচনা শুরু হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে বিমান ভাড়া প্রতি বছর বাড়ানো হলেও তা ছিল সহনীয়। কিন্তু এবার যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা রীতিমতো অমানবিক। জানা গেছে, ২০১৭ সালে এই ভাড়া ছিল এক লাখ ১৮ হাজার টাকা, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ছিল এক লাখ ২৮ হাজার টাকা করে। ২০২০ সালে ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যাননি।

 

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেছেন, সাধারণত বিভিন্ন খরচের কারণে নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে ভাড়া ৫০/৬০ শতাংশ যোগ করে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ বছর অনেক বেশি ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা।

 

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর মধ্যে বিমানভাড়া ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ২ লাখ ৫ হাজার টাকা, মিনার তাঁবু ভাড়া ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ভিসা ফি ৮ হাজার ৫১৭ টাকা, খাবার খরচ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

 

হজের এ খরচ অনেকেই অস্বাভাবিক মনে করছেন। বিভিন্ন সংগঠন থেকে হজের খরচ কমানোর দাবি জানানো হচ্ছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদলত থেকে হজের এই প্যাকেজ কেন জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজের খরচ বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

 

বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে প্যাকেজ থেকে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু যৌক্তিক মনে করছেন না অনেকেই। ফলে খরচ আরো কমানোর দাবি তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, এ বছর ঘোষিত প্যাকেজই সর্বনিম্ন। আগামী বছর থেকে হজের খরচ আরো বাড়বে।

 

এর কারণ হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সৌদি আরবের হারাম শরিফের কাছাকাছি বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় আগামী বছরগুলোতে হজের খরচ আরো বাড়বে, তাই এবারের হজ প্যাকেজকে সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচনা করছে তারা। এ কারণে হজে গমনেচ্ছুদের এবার হজে যেতে নিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

 

রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় এরই মধ্যে সাত দফা বাড়িয়েছে সরকার। এরপরও কোটা পূরণ হচ্ছে না। কারণ এবার হজে গমনেচ্ছুদের খরচ সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও সৌদি আরবের হারাম শরিফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় এ বছর হোটেল ভাড়া নেয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক পরিমাণ অর্থে হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে।

 

সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন কারণে এ বছরের হজ প্যাকেজকে হ্রাসকৃত প্যাকেজ হিসেবে ধরা যায় এবং সেই বিবেচনায় একই ধারাবাহিকতায় বলা যায় যে, আগামী বছরগুলোতে হজ প্যাকেজের মূল্য আরো বাড়বে। কারণ ভেঙে ফেলা বাড়ি/হোটেল গড়ে তুলতে আরো দু-তিন বছর লাগবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

 

সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।

 

দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। পরে সেটি এক দফা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। সেই সময় শেষ হওয়ার পর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায়। আরো এক দফা সময় বাড়িয়ে ১৫ মার্চ করা হয়। তৃতীয় দফায় ২৩ মার্চ করা হয়। কোটা পূরণ না হওয়ায় এই সময়সীমা আরো এক দফা বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করা হয়। সেখান থেকে বাড়িয়ে সর্বশেষ ৫ এপ্রিল করা হয়েছে।

 

আগামী বুধবার এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখনো নিবন্ধনের বাকি অনেকে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর পর গত ১ মার্চ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৭৮৮ জন হজে যেতে নিবন্ধন করে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ৬৭১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৬০টি এজেন্সির মাধ্যমে ৩১ হাজার ১১৭ হজযাত্রী নিবন্ধন করে। গত ৬ মার্চ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় মাত্র ৫০ হাজার ৭৭৮ জনে।

 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক হিসেবে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন আট হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। তবে এখন চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করতে বলা হলেও অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এজন্য ৭ বার সময়সীমা বাড়াতে হয়েছে।

 

তবে এ বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী এর আগে বলেন, আগেও অনেকবার এমন হয়েছে যে, নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রী পাওয়া যায়নি। তবে শেষের দিকে ৪/৫ দিনে আবার কোটা পূরণও হয়ে যায়।

 

এবারো সব কোটা পূরণ হয়ে যাবে এবং ১ লাখ ২৭ হাজার বাংলাদেশিই হজের জন্য নিবন্ধন করবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি