মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: তিনি সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়। বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে নানা সমলোচনা-আলোচনা। কখনো স্ট্যাম্প ভেঙে, কখনো দর্শক পিটিয়ে আলোচনায় থাকেন। কিন্তু এসব পাত্তা দেন না তিনি। চলেন নিজের গতিতে। মাঠেও সাকিব একই রকম। কোনো হিসাব নেই তার। কত রান হলে কোন রেকর্ড হবে, আর কয়টা উইকেট পেলে কাকে পেছনে ফেলা যাবে এসব অঙ্ক মেলান না। রেকর্ডগুলো এমনিতে এসে ঢুকে পড়ে তার থলিতে। কিন্তু একটু হিসাবী হলে তার ঝুলিটা আরও পূর্ণ হতো এমনই মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, খেয়ালিপনা না করলে সাকিবের রেকর্ড আরো ঋদ্ধ হতো। গতকাল আর একটা টেস্ট সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার পর আবারো সে কথাই মনে হয়ে সাকিব দর্শকদের।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিন ফরমেটে অটোচয়েস সাকিব আল হাসান টেস্টে সেঞ্চুরি পান না অর্ধযুগ। এই হিসাবটা হয়তো সাকিব আল হাসান জানতেন না। কিন্তু তার দর্শকরা ঠিকই মনে রেখেছে। তারা চেয়েছিলেন আইরিশদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে ছয় বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাবেন তিনি। কিন্তু আশায় জল ঢেলে দিলেন পোস্টার বয় নিজেই। আউট হয়ে গেলেন ৮৭ রানে। ভেঙে গের লাখ লাখ দর্শকের মন। ২০১৭ সালের মার্চে কলম্বোর বিপক্ষে সর্বশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ সেঞ্চুরি ছিল ৮৬ ইনিংস আগে। এই সময়ে ২০টি হাফ সেঞ্চুরিরও দেখা পেয়েছেন সাকিব।
কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। পুরো ইনিংসই খেলছিলেন আগ্রাসী হয়ে। ৪৫ বলে পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরিও, খুব একটা ভুগছিলেনও না। ধীরে ধীরে বাড়ছিল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা, শেষ অবধি সেটি পেলেন না তিনি।
আইরিশদের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। ৯ বাউন্ডারিতে ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান। এরপরও চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাটিং। লাঞ্চের পর থেকেই সাকিবকে ক্রমাগত স্টাম্পের অনেক বাইরে বল করতে থাকেন আইরিশ বোলাররা। শেষ অবধি সফলও হয়েছেন তারা। সেঞ্চুরি থেকে কেবল ১৩ রান দূরে থাকতে আউট হয়েছেন সাকিব। ১৪ চারে ৯৪ বলে ৮৭ রান করার পর সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব।
এদিকে গতকাল এ ধরনের আউটের মধ্য দিয়ে সাকিব ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে আউট হলেন ১৯ বার। যে কারণে অনেকের প্রশ্ন, কাছাকাছি গিয়ে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপের তালিকা যদি করা হয় তাহলে কী বাংলাদেশের সুপারস্টার সাকিব আল হাসান শীর্ষে থাকবেন? ক্রিকেটে নার্ভাস নাইন্টিজ আলাদা টার্ম-ই রয়েছে। তবে এটাকে যদি ৮০-১০০ রানের মধ্যে হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যাবে শুধু টেস্টেই সাকিব সেঞ্চুরি মিস করেছেন ১৩ বার। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা উনিশ। এ সময়ে আউট হয়েছেন ১৫ বার। নটআউট ছিলেন চার ইনিংসে।
গতকাল সেই তালিকাটা আরো বড় করলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অফস্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। সেখানেই শেষ তার ৯৪ বলে ৮৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস। শুধু সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকবে সাকিবের। নয়তো আইরিশ বোলারদের উইকেটের দুই পাশে নাচিয়ে যেভাবে ইনিংস বড় করেছেন তাতে স্রেফ মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। সাতসকালে মুমিনুল হককে হারানোর পর মাঠে নেমে প্রথম বলেই চার হাঁকান।
সেই বেঁধে দেয়া সুরেই পরবর্তীতে ইনিংস লম্বা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ঝুঁকিপূর্ণ দু-একটি শট খেলেছেন। বাকিটা সময়ে ২২ গজে যতটা সময় সাকিব কাটিয়েছেন, ততক্ষণই খেলেছেন নজরকাড়া সব শট। ৪৫ বলে ফিফটি তুলে নেয়ার পর সেঞ্চুরির দিকে তরতর করে এগিয়ে যান। কিন্তু ৮৭ রানে প্রচণ্ড বাজে শট খেলে নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন প্রতিপক্ষকে। পরিসংখ্যানই বলছে, সেঞ্চুরি মিস সাকিবের নতুন কোনো ঘটনা নয়।
প্রসঙ্গত, ৯৭ রানে সেঞ্চুরি মিস করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১২ সালে। ৯৬ রানে আউট হয়েছেন দুইবার। একবার ছিলেন নটআউট। ৮৯ রানে একবার আউট হয়ছিলেন, একবার নটআউট ছিলেন। এছাড়া ৮০ থেকে ৮৯ রানে ৯ ইনিংসে সাকিব আটকে গেছেন।
ভোরের আকাশ/আসা