logo
আপডেট : ৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:০২
ব্যবসায়ীদের কান্না থামছেই না
ইমরান খান

ব্যবসায়ীদের কান্না থামছেই না

ইমরান খান: বঙ্গবাজার অগ্নিকান্ডের চার দিন গত হলো। এখনো ধ্বংসস্তপের নিচে জ্বলছে নিভু নিভু আগুন। ধোঁয়া উড়ছে। এখনো সেখানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। এর মধ্যেই কেউ কেউ ময়লারস্তপে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। খুঁজছেন যদি পরার মতো কোনো কাপড় পাওয়া যায়।

 

অন্যদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিবর্ণ, বিমর্ষ চেহারা। ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের কান্না যেন থামছেই না।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, নিরুপায়। হতভম্ব। গত কয়েকদিনে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া মার্কেটের সামনেই কাটছে যেন রাতদিন। রাত ঘনিয়ে এলেও বাসায় যেতে ইচ্ছে করে না তাদের। বঙ্গবাজার মার্কেটের এক পাশের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। এনেক্সকো মার্কেটের সামনে থেকে বঙ্গবাজার মার্কেটগামী রাস্তা বন্ধ। ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে এটি করা হয়েছে বলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান।

 

বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করতে তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। বঙ্গমার্কেটের পাশের এনেক্সকো টাওয়ারের সামনে অস্থায়ী এ তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করেছে প্রশাসন।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে এ সময় কয়েকশ ক্ষতিগ্রস্তকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেকা গেছে। তাদের হাতে দোকানের ভিজিটিং কার্ড, ক্যাশ মেমো ও এনাইডি কার্ড।

 

ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সায়েম ইমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড হারিয়ে কিংবা আগুনে পুড়ে গেলে তথ্য কেন্দ্রে এসে জিডি করতে পারবেন।

 

ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটগুলোর বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, বঙ্গবাজার মার্কেটে এখন আর আগুন নেই। মাঝে মধ্যে অল্প ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে এনেক্সকো টাওয়ারের পঞ্চম তলায় এখনো মাঝেমধ্যে ছোট ছোট আগুন দেখা যাচ্ছে মালামাল সরানোর সময়।

 

তিনি জানান, সেগুলো এখন নেভাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভস্মীভ‚ত আদর্শ মার্কেটে ময়লার স্তপের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ। তিনি জানান, তিনি আর তার ছেলে মিলে কাপড় বিক্রি করতেন। দোকানটি পুড়েছে ছাই হয়ে গেছে। দোকানে কিছু নগদ টাকাও ছিল তাও পুড়েছে। বাপ-ছেলে এখন অসহায়। বৃদ্ধ ব্যবসায়ী বলেন, টাকা নেই। দোকান নেই। কী করব বুঝতে পারছি না। সামনে ঈদ, কিছুদিন পরে ঘরেও খাবার থাকবে না। কার কাছে যাব, হাত পাতব, এটা কীভাবে সম্ভব... বলেতে বলতে কাঁদতে থাকেন তিনি।

 

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এনেক্সকো টাওয়ারে গিয়ে দেখা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া মালামাল খুঁজে খুঁজে বের করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্য থেকে বেছে বেছে বের করছেন গুটিকয়েক অক্ষত মালামাল। এসব মালামল বস্তায় ভরে বহুতল মার্কেটের ওপর থেকে নিচে ফেলছেন। নিচে থেকে নিজের লোকজন তা সংগ্রহ করছেন। এরকম একটি বস্তা নিচে পড়তেই তা টেনে সড়কের ফুটপাতে নিয়ে যান রফিক নামে এক যুবক।

 

বস্তাটি খুলে খুঁজতে থাকেন অক্ষত কোনো কাপড় পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু না, পুরো বস্তা তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটি অক্ষত কাপড় পাওয়া যায়নি। তারপরও তা কাঁধে করে নিয়ে যান তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ফুটপাতে যদি বিক্রি করতে না পারি ঘরের ময়লা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করব। আর কী করার আছে বলেন। লাখ লাখ টাকার মাল তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিচ্ছু বাকি নাই। চলব কীভাবে বলেন।

 

প্রায়ই অভিন্ন কাজ করছিলেন আরো অনেকে ব্যবসায়ী। এনেক্সকো টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালাম বলেন, ভবনের পাঁচতলায় এখনো ধোঁয়া উড়ছে। আবার মাঝেমধ্যে আগুনও জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তবে পানির সংকট থাকায় সময় বেশি লাগছে বলে জানান তিনি।

 

বঙ্গবাজারে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা: রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন মো. রাজু, শাওন ও শাহাদাৎ হোসেন।

 

বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মাসুদুল হাসান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বংশাল থানার এসআই ইস্রাফিল হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটে আগুন নেভানোর জন্য বংশাল থানাধীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরসহ অন্যান্য ফায়ার সার্ভিসের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করে। একপর্যায়ে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটে লাগা আগুন আশপাশের মার্কেটসহ বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এনেক্সকো ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।

 

আগুনের ভয়াবহতা এমন ছিল, অনেক প্রচেষ্টার পরও ফায়ার সার্ভিস পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। এ সময় অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জন দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রসহ বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের বিপরীত পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হঠাৎ করেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

 

তারা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিসহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে সরকারি দায়িত্ব¡ পালনে বাধা দেন। বাদী ও তার সহযোগীরা সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহতের চেষ্টা করলে একপর্যায়ে অজ্ঞাত আসামিরা তাদের সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, লোহার রড ও লাটিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে বাদী গুরুতর আহত হন।

 

ঘটনাস্থলে থাকা এসআই (নিরস্ত্র) মো. রুবেল খানও জখম হন।

 

ভোরের আকাশ/নি