logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১৪
জাতীয় নির্বাচন
সংবিধানের বাইরে সমাধান নেই: আওয়ামী লীগ
নিখিল মানখিন

সংবিধানের বাইরে সমাধান নেই: আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৯ মাস বাকি। সমঝোতার বিপরীত স্রোতে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই দল।

 

সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে চলেছে বিএনপি। আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিদ্যমান সরকারই নির্বাচনের সময় চলমানভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে।

 

তাদের মতে, উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

 

শুধু তাই নয়, তারা বলেছে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই এ দাবি আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। বিএনপির এ ধরনের হুঁশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দুই দলের এমন কঠোর অবস্থানে রাজপথে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

 

গত ১৭ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সরকার বারবার সংবিধানের ওপর আঘাত এনেছে। তারা সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

গত ২৯ মার্চ সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে একই সুরে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন লাঞ্চের দাওয়াত দিয়েছিল। সেখানে বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা কেয়ারটেকার সরকারে ফেরত যেতে পারব না। তারা চায় বাংলাদেশে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হোক। তারা তা বলতেই পারে। এটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রও বলতে পারে। কেননা তারা আমাদের বন্ধু।

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন বাস্তবায়ন করবে ইলেকশন কমিশন। তখনকার সরকার রুটিন ওয়ার্ক করবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফেরা সম্ভব নয়। বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখুক, তা কখনো পূরণ হবে না বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

এভাবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ নেতারাও ঘুরেফিরে একই ধরনের মন্তব্য করে আসছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়টি মূলত সংবিধান পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে। তারা মূল যে দাবিতে অনড় তা হলো, নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যেটি বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে অসম্ভব।

 

এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদি সংবিধান সংশোধন করা না হয় এবং যদি আগের দুটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়, তাহলে কি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে? যেমনটা করেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে? বিএনপি কি নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলন-সংগ্রাম চালাবে?

 

আর বিদ্যমান সংবিধান অনুয়ায়ী অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন প্রতিহত করতে গেলেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হয়ে উঠবে সহিংস ও অস্থিতিশীল। এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

নির্বাচন কমিশনের মধ্যেও এমন শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুদলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক।

 

এই অনড় অবস্থানের মধ্যে নির্বাচন হলে এবং কোনো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সিইসি হিসাবে আমি বলব, নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর ঝুঁকি থাকতে পারে। একটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, মানুষ বিপদগ্রস্ত হতে পারেন।

 

নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা হলো ইসি নির্বাচন করবে সংবিধান অনুযায়ী। বর্তমান সংবিধানে যেটা বহাল আছে, সেটাই অনুসরণ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি