logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১৩:২৩
সম্পাদকীয়
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিতে হবে

‘সুরক্ষিত বিশ্ব, নিশ্চিত স্বাস্থ্য’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে কাঠামোগত ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে।

 

আমাদের জীবনযাপনের ধরন বদলেছে। খেলার মাঠ নেই, হাঁটার ব্যবস্থা নেই। সবাই অলস হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি চিকিৎসায় জনগণের খরচ বেড়েছে। চলমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।

 

স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্যও প্রকট। যা খুবই দুঃখজনক। তবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনেই চলমান স্বাস্থ্যের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হতে পারে। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হলো স্বাস্থ্যসেবা। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশই গ্রামে বসবাস করে।

 

গ্রামের কৃষক ও হতদরিদ্র মানুষ তাদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ওপর। কিন্তু এগুলো চিকিৎসক সংকটসহ নানা রকম সংকট ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত। তাই গ্রামীণ দরিদ্র মানুষগুলো প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে।

 

প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বড় সংকট হলো লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির। আবার যে সরঞ্জামাদি আছে তারও সদ্ব্যবহার হয় না, যে লোকবল নিয়োজিত আছে তাদেরও কর্মস্থলে যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হচ্ছে না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ করার পরামর্শ দিয়েছে।

 

গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় বেতন-ভাতা বাবদ, বাকি অর্থ ব্যয় হয় স্বাস্থ্যসেবার জন্য, যা খুবই অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

 

এ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে বর্ধিত বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পত্রিকার পাতায় প্রায় দিনই ছাপা হয় কোনো না কোনো এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশার খবর। তার ওপর আছে নানারকম দুর্নীতি। সরকারি বিনামূল্যে বিতরণের ওষুধ বিক্রি হয় বাজারে।

 

অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব প্রকট। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধ করার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারি দরকার। সরকার একজন চিকিৎসককে গ্রামের হাসপাতালে ২ বছর থাকার নিয়ম করে দিলেও তা কেউ মানছে না। অধিকাংশ ডাক্তার যোগদানের কয়েক মাস পরেই বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে শহরে চলে যান।

 

ফলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের চিকিৎসাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশে কার্যকর কোনো স্বাস্থ্য নীতি নেই। এখন আমাদের আগামী ৫০ বছরের জন্য স্বাস্থ্য খাতের রূপরেখা নিয়ে ভাবতে হবে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বৈষম্যমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা।

 

ভোরের আকাশ/নি