logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:৫৭
৪০০ বছরের চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ, এখনো নিয়মিত নামাজ হয়
ফেনী প্রতিনিধি

৪০০ বছরের চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ, এখনো নিয়মিত নামাজ হয়

চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়া গোধা গ্রামে ঐতিহাসিক ‘চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ’। মসজিদের দেয়ালে লেখা নির্মাণ সাল অনুযায়ী এ স্থাপত্যের বয়স ৪০০ বছরের বেশি। এত বছর আগের মসজিদে এখনো নিয়মিত নামাজ হয়। মসজিদের নির্মাণ কাঠামোও প্রায় একই রকম রয়েছে।

 

মোগল আমলের বিশিষ্ট ব্যক্তি চাঁদগাজী ছিলেন বাংলার বারো ভূঞাদের একজন। তার নাম অনুসারে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের চাঁদগাজী বাজারের অদূরে মাটিয়াগোধা গ্রামে ‘চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা কালের সাক্ষী হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

 

মসজিদের প্রধান দরজার একটু উপরে কালো কষ্টিপাথরে খোদাই করে ফারসি ভাষায় মসজিদের নির্মাণকাল, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও ফারসি ভাষায় কবিতার দুটি লাইন লেখা রয়েছে। নির্মাণ সাল ১১২ হিজরি লিখে শেষে একটি সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে দেয়া আছে।

 

ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষিত চাঁদগাজী ভূঞার বংশধর মাওলানা আনোয়ার উল্লাহ ভূঞা বলেন, হিজরি এক হাজার বছর পর তারিখ লেখার সময় এক হাজার অংকটি না লিখে শুধু অবশিষ্ট সংখ্যা লেখা হয়। এখানে ১১২২ সালের জায়গায় ১২২ সাল লেখা হয়েছে। এ নিয়মটি সৌদি আরবে হিজরি তারিখ লেখার ক্ষেত্রে আজও চালু রয়েছে।

 

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট, উচ্চতা ৩৫ ফুট ও চারপাশের দেয়াল চার ফুট পুরু। ২৮ শতক জায়গার উপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী চুন, সুড়কি ও ছোট ছোট ইট দিয়ে তৈরি। মসজিদের ছাদে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ এবং চারকোনায় ও মাঝে রয়েছে উঁচু ও সরু আকারের আরো কয়েকটি গম্বুজ।

 

এ গম্বুজগুলোর চারপাশে রয়েছে খোদাই করা সুদৃশ্য কারুকাজ। মসজিদের চারপাশের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লতা ও ফুলের চিহ্নে কারুকাজ ও ছোট ছোট বাক্স সাদৃশ্য স্থাপত্য নকশা। মসজিদের মূল গেট এমনভাবে তৈরি যে মসজিদে মাথা নিচু করে প্রবেশ করতে হয়। এ গেটের দক্ষিণ পাশে রয়েছে ওপরে উঠার সিঁড়ি। গেট দিয়ে উঠে পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে আজান দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

 

এ ছাড়া গেট লাগোয়া মসজিদের তিন পাশে মুসল্লিদের বসার জন্য পাকা সিঁড়ি তৈরি ছিল, যা আজও স্থানীয়রা ব্যবহার করে আসছেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভূঞার কবর। কবরটি মাটি চিহ্ন দেয়া। পাকা করা হয়নি। মসজিদকে ঘিরে রাখা সীমানার দুপাশে রয়েছে কবরের স্থান। সেখানে সম্প্রতি মারা যাওয়া কয়েকজনের কবরের পাশে তাদের নামফলক রয়েছে।

 

এই ঐতিহাসিক চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গেজেটভুক্ত করে। ১৯৯৩ সালে একবার মসজিদটিতে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে মেরামত করা হয়। তারপর থেকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে কালের সাক্ষ্যবহনকারী ফেনীর গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক ‘চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ’।

 

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, মসজিদটি জেলার পর্যটনের অন্যতম স্থান এবং এটি অনেক বছরের ঐতিহ্য। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকাভুক্ত মসজিদটি সরকারিভাবে সংস্কার করা হয়েছে। আবারো সংস্কার দরকার হলে করা হবে।

 

মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ক ও চাঁদগাজী ভূঞার বংশধর মাওলানা আনোয়ার উল্লাহ বলেন, মসজিদটি আমাদের অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। আমরা চাই প্রশাসন এটিকে সংস্কার করুক। আরো হাজার বছর টিকে থাকুক মসজিদটি। তিনি বলেন, ১৯৯৩ এবং ৯৪ সালে দু’বার এটি সংস্কার হয়েছে। এরপর আর সংস্কার হয়নি। আমরা সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে আবেদনও করেছি।

 

জামসেদ আলম নামের আরেক বংশধর বলেন, এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমাদের পূর্বপূরুষ চাঁদগাজী ভূঞা। মসজিদের আঙিনায় এখনো তার কবর রয়েছে। মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে।

 

ভোরের আকাশ/নি