logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১৯
চূড়ান্ত হিসেবে দেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি
নিজস্ব প্রতিবেদক

চূড়ান্ত হিসেবে দেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি

চূড়ান্ত হিসেবে দেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন। নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন। চূড়ান্ত এই হিসাবে পুরুষের চেয়ে নারী জনসংখ্যা ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৭ জন বেশি।

 

রোববার জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ পিইসি (পোস্ট ইনিউমারেশন চেক) জরিপের আলোকে সমন্বয়কৃত জনসংখ্যা সম্পর্কিত এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিবিএস।

 

এতে জানানো হয়, পিইসিতে প্রাপ্ত ২ দশমিক ৭৫ শতাংশের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন যোগ হয়ে দেশের সমন্বয় করা মোট জনসংখ্যা হলো ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে বাস করে। জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে।

 

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। শুমারি শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ২৭ জুলাই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দেশের গণনাকৃত মোট জনসংখ্যার হিসাব দেয়া হয়।

 

পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী শুমারি সম্পন্নের পর গণনাকালে সৃষ্ট কভারেজ ও কনটেন্ট এরর নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) গত বছরের অক্টোবরে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে শুমারি পরবর্তী যাচাই পিইসি জরিপ পরিচালনা করে।

 

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন প্রতিবেদনে বলেন, বিভাগভিত্তিক জনসংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বড় বিভাগ ঢাকার গণনাকৃত জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। সমন্বয়কৃত জনসংখ্যা হলো ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন। যা দেশের মোট সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার ২৬.৮৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বরিশাল বিভাগে। মোট সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার ৫.৪৯ শতাংশ।

 

প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং হিজড়ার সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। পিইসি জরিপ অনুসারে, পুরুষের এনইসি ২.৮১ শতাংশ, সে হিসেবে সমন্বয়কৃত পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন। মহিলার এনইসি ২.৬৯ শতাংশ, সে হিসেবে সমন্বয়কৃত নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, হিজড়া জনসংখ্যা খুব কম হওয়ায় তার এনইসি হিসাব করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ ১৭ হাজার ৫০৭টি থানার ৮৫ হাজার ৯৫৭ জনের আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের লিঙ্গসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই জনসংখ্যারও এনইসি হিসাব করা সম্ভব হয়নি বিধায় তাদের ব্যালান্স পপুলেশন হিসেবে গণনাকৃত ও সমন্বয়কৃত উভয় অংশে যোগ করা হয়েছে।

 

এর আগে গত বছর ২৭ জুলাই আদম শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেশে মোট জনসংখ্যা দেখানো হয় ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা আট কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা আট কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন।

 

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম শুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। এরপর ১৯৮১ সালে জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জনে। ১৯৯১ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৩ লাখে। ২০০১ সালে চতুর্থ আদমশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়। এ সময় জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ২৪ লাখ। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জনশুমারিতে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ। ষষ্ঠ

 

ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।

 

গত বছর বিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ। এক দশক আগে যা ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এতে দেখানো হয় দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্বের হার ১ হাজার ১১৯ জন। যা এক দশক আগে যা ছিল ৯৭৬ জন। এছাড়া ৯৮ জন পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা ১০০ জন।

 

১০ থেকে তার বেশি বয়সি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৮ শতাংশ অবিবাহিত। বিবাহিত ৬৫ শতাংশ। মোট জনংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলিম। হিন্দু ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া প্রতিবন্ধিতার হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

 

এছাড়া দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর হার বিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা দেখানো হয় ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দেশে মোট খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১টি। গড়ে খানার আকার ৪ জন, এক দশক আগে যা ছিল সাড়ে ৪ জন। বিবিএসের শুমারি অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন গ্রামের বাসিন্দা।

 

আর শহরের বাসিন্দা পাঁচ কোটি ২০ লাখ নয় হাজার ৭২ জন। দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬। পুরুষ জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী জনগোষ্ঠীর এ হার ৭২ দশমিক ৮২।

 

ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলনে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১-এর প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন শুমারিতে গণনা করা এবং পিইসির মাধ্যমে সমন্বয় করা মোট জনসংখ্যার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি