logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৩০
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যবসায়ীদের
ইমরান খান

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যবসায়ীদের

ইমরান খান: ধ্বংসস্তূপের ওপরই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বঙ্গবাজারসহ আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু না হলেও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সসহ, ইসলামিয়া ও এনেক্স টাওয়ারের অনেক ব্যবসায়ীরায় দোকান খুলেছেন। অন্য মার্কেটের গোডাউনে রক্ষিত মালামাল নিয়েই নতুন করে সংগ্রাম শুরু হয়েছে তাদের।

 

তবে আগুনে ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়া বঙ্গকমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী দোকান চালু করতে এখনো কিছুদিন সময় লাগবে। এরই মধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ফান্ডে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের দেয়া ২২ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়া ৫০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সব পক্ষের অংশগ্রহণে আপ্লুত বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরাও।

 

রোববার রাজধানীর বঙ্গবাজারে মার্কেটে সরেজমিন দেখা যায়, পুড়ে অঙ্গার হওয়া বঙ্গবাজারে বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন শ্রমিকরা। অগ্নিকান্ডের পাঁচ দিন পরও সেখানে জ্বলছে আগুন। শ্রমিকরা যেখানে হাত দিচ্ছেন, সেখানেই বেরিয়ে আসছে আগুন।

 

আগুনের তাপে বর্জ্য অপসারণে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। ধ্বংসস্তূপের পাশাপাশি পোড়া ভবনের ভেতরেও আগুন দেখা যায়। পোড়া কাপড়ের ভেতর থেকে এ আগুন জ্বলছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সড়কে দোকান বাসিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা শাড়ি হাউসের মালিক আজিজ সরকার। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দোকানে থাকা বেশিরভাগ মালামাল পুড়ে গেছে। তবে গোডাউন ও বাসায় মজুত করা কিছু শাড়ি নিয়ে এখানে বসেছি।

 

ভেবেছিলাম সামনে ঈদের বাজার। বেচাকোনা ভালো হবে। সন্ধ্যার পর বেচকেনা হতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আগেই দোকান গুটিয়ে নিতে হবে। শুধুই আজিজ সরকার নন, এরকম ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকে তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশের সড়কে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন।

 

তবে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু না হওয়ায় সন্ধ্যার পর কীভাবে ব্যবসা করবেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা। রোববার সকালে হোমিও কমপ্লেক্সসহ, ইসলামিয়া ও এনেক্স টাওয়ারের অনেক ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেছেন। যদিও পুড়ে যাওয়ায় এবং লুটতরাজ হওয়ায় বেশিরভাগ মালের হিসাবই মেলাতে পারছেন না তারা।

 

এদিন বেলা ১১টায় উত্তরা থেকে বঙ্গবাজারে আসেন তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের নেতা আলেয়া। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে ২ লাখ টাকা অনুদান দেন। জানান, এ টাকা হজে যাওয়ার জন্য তিনি জমিয়ে রেখেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুর্দশা দেখে এবার হজে না গিয়ে সে টাকা ব্যবসায়ীদের দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি এই মার্কেট পুড়ে যাওয়া দেখে।

 

একসময় আমরাও এ ব্যবসায়ীদের থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা সাহায্য নিয়েছি। কিন্তু আজ সেই ব্যবসায়ীরা সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এ সামান্য সহযোগিতা করেছি। শুধু আলেয়া নন, বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য আরো ২০ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের অন্যান্য লোকজন।

 

এ অনুদানের টাকা হস্তান্তর করে বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মীর দিপালী বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজ তাদের বিপদের মুহূর্তে আমরা ঈদের কেনাকাটা না করে ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারা দেশ থেকে আমরা ২০ লাখ টাকা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকব।

 

এরপর দুপুরে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠন নেতারা। জসিম উদ্দিন বলেন, এ মার্কেটের একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। এজন্য দোকান মালিক সমিতিকে আহব্বান জানাই এটার একটি ব্যবস্থা করার জন্য। প্রয়োজনে এফবিসিসিআই তাদের পাশে থাকবে।

 

ব্যবসায়ীদের আহব্বান জানাবো তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ব্যবসায়ীরা পাশে দাঁড়ালে সাধারণ মানুষও তাদের পাশে দাঁড়াবে। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নিজেদের এক দিনের বেতন ও ইফতারের খরচের ২ লাখ টাকা ব্যবসায়ী নেতাদের হাতে তুলে দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই।

 

অনেকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। রোববার সকাল থেকেই জমা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তবে অনুদানের এ টাকা হাতে না পৌঁছা পর্যন্ত সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মো. সুমন হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছে। আমার কাছ থেকে তিনবার কাগজ নিয়েছে। তারা কী করে জানি না। আমাদের হাত পর্যন্ত টাকা আসবে কিনা, নিশ্চিত নই। হাতে টাকা না আসা পর্যন্ত বলতে পারব না, আমরা কতটুকু সহযোগিতা পেলাম।

 

ব্যবসায়ীদের এমন শঙ্কার বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, যারা অনুদান পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন, তারা এখানকার ব্যবসায়ী নন। আমাদের ব্যবসায়ীরা এমন কথা বলতে পারেন না। কারণ তারা জানেন এখানে আমরা এ ধরনের কোনো অনিয়ম করি না, যা অনুদান আসবে তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যথার্থভাবেই দেয়া হবে।

 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তালিকা করার বিষয়ে আমরা বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা দেখভাল করছেন। তবে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এখানে যারা সদস্য, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে থাকবে, কে থাকবে না।

 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২৯০০ ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় ব্যবসায়ীদের রাখা দরকার। কারণ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়। তাই শতভাগ ব্যবসায়ীর তালিকা হওয়া প্রয়োজন। তারপর এখানে যদি কখনো ভবন হয়, তখন মালিক যারা আছেন, তারা কে কী বরাদ্দ পাবেন সেটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দেখবেন। কারণ এ মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন।

 

অন্যদিকে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন সম্মেলন। গতকাল ঢাকা জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে ঢাকা কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিষয়টি জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

 

এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আগামী ঈদের আগেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও প্রত্যেককে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। যাদের দোকান আছে তারাসহ ভ্রাম্যমাণ হকারদেরও এ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।

 

আজ সোমবার পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বুথ চালু থাকবে। দরকার পড়লে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বাড়ানো হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি