logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৫০
লোকসানে বন্ধ দেড় হাজার পোলট্রি খামার
সুশিল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

লোকসানে বন্ধ দেড় হাজার পোলট্রি খামার

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় বন্ধ হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় হাজার পোলট্রি খামার। বাকিগুলোও রয়েছে লোকসানের মুখে। অভিযোগ রয়েছে, খামারিদের পুঁজি দিয়ে লাভের অংশ নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটরা।

 

এছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও লোকসানের মুখে পড়ছেন খামারিরা। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেক খামারি। খাদ্যর দাম বৃদ্ধি, জনবল সংকটসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি খামারিদের।

 

রূপগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ র্কাযালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রূপগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে খামার ছিল ৩ হাজার ২৯৩টি। এখন টিকে রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯০৬টি। অর্থাৎ ১ হাজার ৩৮৭টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

 

কথা হয় ভুলতা ইউনিয়নের হাটাব এলাকার খালেদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৬ সালে নিজ বাড়িতে ২ হাজার ব্রয়লার বাচ্চা নিয়ে ছোট পরিসরে খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি ব্যবসায় লাভবান হতে থাকেন। পরে তিনি একে একে আরো ৫টি খামার, ৫ হাজার মুরগির সেট তৈরি করেন। ৩টি খামারে তিনি ব্রয়লার ও ২টিতে সোনালি মুরগি তোলেন। কিন্তু খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়তে হয় তাকে। তাই একে একে ৪টি খামার বন্ধ করে দেন তিনি।

 

কথা হয় একই এলাকার টিপু সুলতানের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০১ সালে নিজ বাড়িতে ৫০০ ব্রয়লারের বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন। পরর্বতী সময়ে ২ হাজার মুরগির সেট করেন। তিনিও একই কারণে গত ৬ মাস আগে তার খামারটি বন্ধ করে দেন।

 

উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর এলাকার আওয়াল মিয়া জানান, তিনি ২ হাজার লেয়ার বাচ্চা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পরবত সময়ে তিনি ব্যাংক ও সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়ে সোনালি ও লেয়ার মিলিয়ে ২০ হাজার মুরগির সেট তৈরি করে বাচ্চা তোলেন। গত বছর একে একে তিনিও খামার বন্ধ করে দেন একই কারণে।

 

শুধু খালেদ মোল্লা, টিপু সুলতান বা আওয়াল মিয়া নন, রূপগঞ্জ উপজেলায় গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৩৮৭টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। দফায় দফায় পোলট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানে পড়ছে খামারিরা। খামারিদের অভিযোগ, মুরগির বাচ্চা উৎপাদন কোম্পানিদের সিন্ডিকেট ছাড়াও বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনোয়োগ করার কারণে টিকতে পারছে না ছোট খামারিরা।

 

ভুলতা ইউনিয়নের মেসার্স সোমাইয়া পোলট্রি ফিড ও ওষুধ বিক্রেতা সাইদুর বলেন, এক বছরের ব্যবধানে মুরগির খাবার ও ফার্মের প্রয়োজনী জিনিসপত্রের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে মুরগির খাবারের বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে সে খাবার ৩ হাজার ৬০০ টাকা।

 

গত এক বছর আগেও কুঁড়া বা তুষের বস্তা ছিল ২০০ টাকা র্বতমানে ৬০০ টাকা। রাইস পলিশ ২৬ টাকার জায়গায় বিক্রি করছি ৩৪ টাকায়। সয়াবিন ৩৫ টাকার জায়গায় বিক্রি করছি ৮৬ টাকায়। আগে যেখানে ভুট্টার কেজি ছিল ১৭ টাকা র্বতমানে সেটি ৩৭ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এসব কারণে অনেক ছোট খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে করে আমাদের ব্যবসাও ছোট হয়ে আসছে। আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

 

ভোলাব ইউনিয়নের বাসুন্দা এলাকার আরিফ মিয়া বলেন, আমার খামারে বর্তমানে ৫ হাজার ১৮০টি লেয়ার মুরগি আছে। প্রতিদিন ৪ হাজার ডিম পাওয়া যায়। বর্তমানে একটি ডিমের মূল্য ১১ টাকা তারপরও গত ২/৩ বছর আগে ভালো ছিলাম তখন ৫-৭ টাকায় ডিম বিক্রি করতাম। এখন ১১ টাকা পিস ডিম বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখতে পারছি না।

 

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক বছর আগেও মুরগির খাবার ফিডের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা, বর্তমানে সেই ফিডের দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়াও সব ওষুধের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যে লেবারকে মাসে দিতাম ৩ হাজার টাকা এখন তাকে দিতে হয় ৮ হাজার টাকা। এমতাবস্থায় আমাদের টিকে থাকাটাই মুশকিল।

 

উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডা. মো.মাহমুদুল হাসান বলেন, পোলট্রি খাবারের দাম ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ছোট খামারিরা টিকতে পারছে না।

 

ভোরের আকাশ/নি