logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১৩:৫২
সম্পাদকীয়
শিক্ষক আন্দোলনে উন্নাসিকতা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষক আন্দোলনে উন্নাসিকতা

কোনো বিবেচনাতেই শিক্ষকদের বঞ্চিত করা ঠিক না। তখনই শিক্ষক সম্প্রদায় রাস্তায় নামেন, যখন আর পথ খোলা থাকে না। সমাজের চারদিকে হাজারো বৈষম্যের মধ্যেও, তারা নিয়মিতভাবে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে, শিক্ষকদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিষয়টি সহানুভ‚তির সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

 

শিক্ষার্থীর নৈতিক ভিত্তি তৈরির সময় যে শিক্ষক জ্ঞানদানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, তখন তাকে মানসিক নির্যাতনে রেখে কোনোভাবেই সভ্য এবং পরিশীলিত প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বুদ্ধিদীপ্ত এবং সুশিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার ভার যাদের হাতে, তাদের কোনোভাবেই রাজপথে রাখা ঠিক না। দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষক শ্রেণি যখন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন, তখন সেই আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করা হলে নতুন কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘৪ লাখ শিক্ষকের দীর্ঘশ্বাস’ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ২০০৪ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতনের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব-ভাতা পেয়ে থাকেন। এরপর থেকেই শিক্ষকরা মূল বেতনের সঙ্গে শতভাগ উৎসব-ভাতা, সরকারি শিক্ষকদের মতো চিকিৎসা-ভাতা ও বাড়িভাড়া দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

 

কিন্তু ১৮ বছর পার হলেও সরকার উৎসব-ভাতায় কোনো পরিবর্তন আনেনি। আর ২০১৯ সাল থেকে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

 

শিক্ষকরা জানান, দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। যাদের বেশিরভাগ আবার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একই নিয়মনীতি অনুসরণ করেন। একই পাঠ্যক্রমে পাঠদান করান। একই প্রশিক্ষণ নেন। অনেক সময়ই দেখা যায়, সরকারির চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফল ভালো হয়। এরপরও তারা বৈষম্যের শিকার। সরকারি শিক্ষকরা মূল বেতনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় বাড়িভাড়া, চিকিৎসা-ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পান।

 

চাকরি শেষে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশনসহ নানা সুবিধা পান। কিন্তু একই কাজ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন থাকলেও তারা সবাই মূলত একই দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের অন্যতম দাবি, শতভাগ উৎসব-ভাতা, সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মতো বাড়িভাড়া, চিকিৎসা-ভাতা ও অন্যান্য ভাতা প্রদান। তবে এখন শিক্ষকদের সব সংগঠনই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আন্দোলনেই বেশি জোর দিয়েছে।

 

সংবাদে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার লাখ শিক্ষকের প্রশ্ন একই। বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিতের যেসব শিক্ষক রয়েছেন তারা প্রাইভেট পড়িয়ে মোটামুটিভাবে চললেও অন্য সব শিক্ষকের সে সুযোগ নেই। সরকারের দেয়া বেতনই তাদের মূল ভরসা। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের এক লাখ কর্মচারীও মাত্র ৫০ শতাংশ উৎসব-ভাতা পান। ফলে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মনেই উৎসব নিয়ে বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবুল বাশার হাওলাদারের বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘সরকারি শিক্ষকদের সবাই শতভাগ উৎসব-ভাতা পান আর আমরা পাই ২৫ শতাংশ, এটা অমানবিক। আমরা ১৭ বছর ধরে শতভাগ উৎসব-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় দেয় না। আর অর্থ মন্ত্রণালয় বলে, শিক্ষা থেকে প্রস্তাব আসে না। আমি বলব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষামন্ত্রী যদি আন্তরিক হন, তাহলে শতভাগ উৎসব-ভাতা পাওয়া কঠিন কোনো ব্যাপার না।’

 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে আছেন শিক্ষকরা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিস্পৃহতা বা উন্নাসিকতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

 

ভোরের আকাশ/নি