logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:২৫
সীমান্তের মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে বর্ডার হাট
শেরপুর প্রতিনিধি

সীমান্তের মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে বর্ডার হাট

বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে লক্ষ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে স্থাপিত হতে যাচ্ছে বর্ডার হাট বা সীমান্ত হাট। এই হাটের স্থান পরিদর্শনে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা

বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে স্থাপিত হতে যাচ্ছে বর্ডার হাট বা সীমান্ত হাট। প্রস্তাবিত ওই বর্ডার হাট স্থাপনের জায়গাটিতে ইতোমধ্যে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গত ৫ এপ্রিল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার আদিবাসী ও কোচ উপজাতি অধ্যুষিত ওই খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাটটি বসানো হলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়সহ স্থানীয় অধিবাসীদের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

এই বর্ডার হাট বা সীমান্ত হাটকে ঘিরে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন তারা। এ নিয়ে এলাকার সব শ্রেণির মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

 

জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোচ সম্প্রদায় ৫৫টি পরিবারের ৫ শতাধিক মানুষ নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে অনাদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে। এদের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ছিল বনবনানী থেকে লাকড়ী সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করা। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢালে নিজের সামান্য জমি কিংবা অন্যের কৃষি জমিতে শ্রমিক হিসেবে কৃষি কাজ করা।

 

কিন্তু গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন সৃজন করায় বনে আর লাকড়ি পাওয়া যায় না। ফলে কোচদের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বন্যহাতির তান্ডবে ফসলহানিসহ শুরু হয়েছে তাদের কষ্টের জীবন। এরই মাঝে এই গ্রামের ১১১২ (টু এস) সীমান্ত পিলার সংলগ্ন এলাকায় বর্ডার স্থাপনের বিষয়টি যেন তাদের মনে আশা জাগিয়েছে। এতে খুলতে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যের নতুন দ্বার।

 

তারা জানান, এই গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে শুধু কোচ উপজাতি নয় এলাকার সব শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবেন। সব মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে সংসার জীবন চালাতে পারবেন।

 

অপরদিকে, খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামে রয়েছে অপরূপ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত গারো পাহাড়। বর্ডার হাটে বাজার সদাই করার পাশাপাশি এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসবেন ভ্রমণপিপাসু মানুষজন। এ ছাড়া যাদের পাসপোর্টের মাধ্যমে অধিক ব্যয় করে ভারত গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন তাদের জন্য বর্ডার হাট হবে এক মহামেলা।

 

দুই দেশের মানুষের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে বর্ডার হাটে ছুটে আসবেন তারা। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা, আত্মীয়স্বজন আর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হবে সীমান্ত এলাকা তথা বর্ডার হাট। সৃষ্টি হবে ভারত-বাংলা বাসিন্দাদের মাঝে সম্প্রতির দৃঢ় বন্ধন আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। এতে সীমান্ত এলাকার বর্ডার হাট ছাড়াও অন্যান্য দোকানপাটেও ক্রয়-বিক্রয় বাড়বে। ওই এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলে তারা জানান।

 

খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রী হরেন্দ্র কোচ, বকুল কোচ, গৌরাঙ্গ কোচ, মায়াদেবী কোচনী, বারমনি কোচনী ও বিরতি কোচনীসহ অনেকেই জানান, এখানে বর্ডার হাট হলে বাংলাদেশিরাই সব চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। কেননা বর্ডার হাটে বিক্রিত ও ক্রয়কৃত উভয় পণ্যেই বাঙালিরা বেশি লাভ করতে পারবে। তারা জানান, এই হাটে বাংলাদেশিদের ফলমূল, কসমেটিক্স, হরলিক্স, চিনি, সুপারি, আদা, মশলা, পারফিউমসহ নিত্যপণ্য ক্রয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 

আর ভারতীয়দের থ্রি কোয়ার্টার সাইজ জিন্সের প্যান্ট, চ্যাপা শুঁটকি, পাঙ্গাস মাছ, পোল্ট্রি মুরগি, ইলিশ মাছ, কাপড় চোপড় ও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্য বিনিময় ও নগদ অর্থে ক্রয় করতে শুল্কমুক্ত হওয়ায় দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন।

 

তারা বলেন, বর্ডার হাট চালু করা হলেই উভয় দেশের ক্রেতাদের পণ্যের প্রকৃত চাহিদা জানা যাবে। বর্ডার হাটে পণ্য কম খরচে পাওয়া গেলে এই এলাকায় চোরাচালান একদম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সীমান্ত এলাকার মানুষের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দ্রুত এই বর্ডার হাটের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবি জানান তারা।

 

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। এই হাট স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই দুই দফায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যৌথসভা ও প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেছি।

 

এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উভয় দেশের কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন ও নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি