মোতাহার হোসেন: দ্বারে সমাগত বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বছরের প্রথম এ দিনটি উদযাপনের জন্য উৎসবপ্রিয় বাঙালি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলাম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবাই, সব বয়সি মানুষ একত্রিত হয়ে পালন করেন বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩০ জাঁকজমকভাবে উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রভাতে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা, টিএসসিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাংলা নববর্ষ আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তায় নিয়োজিত সব সংস্থা পৃথক পৃথক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলছে।
একইসঙ্গে ওইদিন রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা শহরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনস্থলকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গড়ে তোলা হচ্ছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়।
একইসঙ্গে আকাশ থেকে বাংলা নববর্ষের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে আকাশে উড়বে র্যাবের পর্যবেক্ষণ হেলিকপ্টার এবং রমনা বটমূল, টিএসসি, চারুকলা ইনস্টিটিউট এলাকায় থাকবে ডগ স্কয়ার্ড, পোশাকে, সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
এদিকে সোমবার দিনটিকে বর্ণিলভাবে ও উৎসমুখরভাবে আয়োজনে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। গতকাল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচির কথা জানানো হয়। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে ‘ইনটানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে
এদিন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। এছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃক বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কর্তৃক ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আলোচনা সভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট বা একাডেমিগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ উদযাপন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হবে। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বর্ষবরণ উপলক্ষে গত ২০ মার্চ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন’ উপলক্ষে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।
সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। শিশু-কিশোর, ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
তাছাড়া বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে জাদুঘরগুলো বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ভোরের আকাশ/নি