নান্দাইলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী তালগাছ। বর্তমান সরকার তালগাছ রোপণের ওপর জোর দিলেও এক শ্রেণির মানুষ উল্টো এই গাছ কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে।
নানা কারণ দেখিয়ে রাস্তার পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন তালগাছ কেটে বিভিন্ন করাতকলে বিক্রি করছে। এ কারণে ঝড়, বৃষ্টি ও বিজলি (বিদ্যুৎস্পর্শের) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখিসহ জীববৈচিত্র্য।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রামের রাস্তাঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিল সেগুলো আর নেই। যেখানে আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করত। তাদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকত পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা গুটি কয়েক তালগাছ চোখে পড়লেও এখন আর মুখরিত হয় না বাবুই পাখির কিচির-মিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল পৌরসভার নরসুন্দা নদী ব্রিজের পাশে কয়েকটি তালগাছ ও তালগাছে অর্ধশত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেছে। যা একনজর দেখতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়ায়।
নান্দাইল সিটিজেন জার্নালিস্ট ক্লাবের সভাপতি এইচ এম মিজান তালুকদার হারুণ ভোরের আকাশকে জানান, তিনি একটি ঘর তৈরি করছেন, কিন্তু ঘরের তীর দেয়ার জন্য পরিপক্ষ তালগাছ মিলছে না। হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক স-মিল থেকে আরেক স-মিল, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। যদিও কাজের উপযোগী ২-৩টি গাছ মিলছে, তার দাম আকাশছোঁয়া।
জাহাঙ্গীরপুরের ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের আল মামুন আহমেদ বলেন, ১৫-২০ বছর আগে এসব এলাকায় তালগাছের কদর ছিল বেশি। আমরা আমাদের এলাকায় তালের নৌকা বানাতাম। এখন আগের মতো বড় বড় তালগাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে মানুষজন তালগাছ কেটে ফেলে, কিন্তু নতুন করে কেউ আর রোপণ করে না।
উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, এ গাছ রোপণ করলে তাতে বেশি জমি দখল করে না তাই জমিও নষ্ট হয় না। কোনো সার ওষুধ ব্যবহার করতে হয় না। কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। রোপণ করার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে তালগাছে ফল ধরে।
উপজেলার কৃষকরা দাবি করেন, এ বিষয়ে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা এবং তদারকি থাকলে হয়তো গাছগুলো একটু বেশি করে রোপণ করা হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, যেভাবে তালগাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনবসতি বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে বড় বড় গাছপালাসহ জঙ্গল কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাবুই পাখি নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। এ গাছ রোপণের ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
ভোরের আকাশ/নি