কুমিল্লার লাকসামের চারটি উপজেলায় শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে যত্রতত্র গড়ে উঠা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চিকিৎসকদের চেম্বার ও ফার্মেসিগুলোর সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেলের বহর আর আনাগোনায় ভাবিয়ে তুলেছে এলাকার মানুষকে।
ওইসব প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপে জানান দিচ্ছে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই যেন নানা রোগে আক্রান্ত। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অপতৎপরতায় সাধারণ রোগীরা অনেকটাই অসহায়। জেলার দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের এ দেউলিয়াত্বের ব্যাপারে সবাই যেন নীরব দর্শক।
জেলার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের সহায়তায় ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং কৌশলে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মবহিভর্‚ত। অসাধু চিকিৎসকরা নানা লোভে পড়ে বিক্রয় প্রতিনিধিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এলাকার অশিক্ষিত ও সাধারণ রোগীদের ভেজাল এবং নিম্ন মানের ওষুধ ক্রয়ে বাধ্য করছেন।
প্রতিদিন ওইসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে রোগীরা বের হতে না হতেই শুরু হয় বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌঁড়াদৌড়ি। এতে রোগী কিংবা স্বজনদের পড়তে হয় মারাত্মক বিপাকে। চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ কিংবা উপহার দিতে মহড়া চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং প্রতিনিধিদের। ওষুধ কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং কৌশলের নামে চলছে বেপরোয়া অবৈধ বাণিজ্য ও অসুস্থ্য স্বাস্থ্যসেবা।
এলাকায় অসংখ্য কোম্পানির প্রতিনিধিরা মাসিক টার্গেট বাড়াতে চিকিৎসকদের পিছনে বিনিয়োগ করছেন দু’হাতে। রোগীর ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরা কোন কোন কোম্পানির কি ওষুধ লিখেছে তা দেখানো নিয়ে রোগীদের সাথে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের ঘটে যাচ্ছে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা। ওইসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগী সমাগম দেখে ওইসব প্রতিনিধিরা লোভনীয় অফারে চিকিৎসকদের কলম, পেড, চাবির রিং, টিভি, ফ্রিজ ও আসবাবপত্রসহ মোটা অংকের পকেট বাণিজ্যে ওষুধ ক্রয়ের নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন।
অপরদিকে ইতিমধ্যে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ কোম্পানির সব ওষুধ ও ১৪ কোম্পানির এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই ৩৪ কোম্পানির মধ্যে সরকার ইতিমধ্যে ১১ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আবার ২-৩টি কোম্পানির জিএমপি সনদ আছে বলে প্রপাকান্ডা থাকলেও চলছে নানা বিতর্ক নিয়ে গুঞ্জন।
এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এলাকায় বাজার মনিটরিং না থাকায় এবং হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা শর্তেও স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতে ওইসব কোম্পানির ওষুধ বিক্রি এবং লোভি চিকিৎসকরাও কমিশন বাণিজ্যের কারণে রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছে এবং রোগীদের তা কিনতে বাধ্য করছেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্মকর্তাদের নীরব ভূমিকায় এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
এ ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা সরকারি হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. নাজিয়া বিনতে আলম জানায়, কোন উপজেলার হাসপাতালগুলোতে কি হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে আমি এলাকার স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে সপ্তাহে দু’দিন অর্থাৎ সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুই ঘন্টা সময় দিয়েছি তাদের চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করার জন্য। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার বাইরে এ হাসপাতালে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।
ভোরের আকাশ/নি