logo
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১৬:২০
কেসিসি বলছে অনুমোদন নেই
খুলনায় দুই কাউন্সিলরের নামে এলাকার নাম
এজাজ কায়েস, খুলনা

খুলনায় দুই কাউন্সিলরের নামে এলাকার নাম

কেসিসির দুটি এলাকার নামকরণ (হাফিজ নগর, আনিছ নগর) করা হয়েছে দুই কাউন্সিলরের নামে

খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের সামনে দিয়ে মেডিকেল কলেজের দিকে যেতে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স পার হওয়ার পর হাতের বাঁ পাশে দুটি বড় সাইনবোর্ড। একটি সাইনবোর্ড ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমানের ছবি দিয়ে লেখা হাফিজ নগর। প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে দোকানপাট ও বাড়িঘরের সামনের ঠিকানার জায়গায়ও একই নাম লেখা। ২০১৩ সালে কাউন্সিলর হাফিজ তার নিজ নামে এই এলাকার নামকরণ করেছেন।

 

অন্যদিকে নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাট থেকে ময়ূর নদীর তীর ধরে সড়ক দিয়ে ঢুকতে কালভার্টের ওপর আর একটি সাইনবোর্ডে দেখা যায়, এলাকার নাম আনিছ নগর। মনোয়ারা বেগম সড়কসহ পার্শ্ববর্তী এক বর্গকিলোমিটার এলাকার সব দোকানপাট, প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরের সামনে এলাকার নাম লেখা আনিছ নগর। জানা গেছে, এই এলাকার নামকরণও নিজ নামে করেছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিশ্বাস।

 

উভয় এলাকার বাসিন্দারাই বলছেন, নিয়ম না মেনে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) এই দুটি এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। এই নামকরণের অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেসিসি। ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী খান বলেন, এলাকায় রাস্তা-ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার প্রভৃতি করা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব।

 

এই কাজগুলো হয় সিটি করপোরেশনের টাকায়, কোনো কাউন্সিলর তার নিজের টাকায় করেন না। তাই এসব কাজ করার কথা বলে এলাকার নাম নিজের নামে করা অবৈধ। এমন হলে তো সব কাউন্সিলর তার এলাকার নাম নিজের নামে করতে পারতেন।

 

আনিছ নগর নামে এলাকার লোকজনও একই অভিযোগ করেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবিদ উল্লাহ বলেন, এলাকায় অনেক সম্মানিত ব্যক্তি ও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাদের কারও নামে নামকরণ না করে কাউন্সিলরের নিজের নামে এলাকার নাম রাখা ঠিক হয়নি।

 

এ বিষয়ে কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, আমি এই এলাকা থেকে সাতবার কাউন্সিলর হয়েছি। টানা ৩৬ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আগে এ এলাকার নাম ছিল খোড়া বস্তি, যা শুনতে খুব খারাপ লাগত। এলাকার পরিবর্তন ও উন্নয়ন করায় স্থানীয় লোকজন নাম পাল্টে হাফিজ নগর করেছে। আমি এই নাম দেইনি। সিটি করপোরেশনে আবেদন করে ১০ বছর আগে এই নামকরণ করা হয়েছে।

 

আরেক কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর আগে এই এলাকা বিল ছিল। ঘরবাড়ি গড়ে ওঠার পর সিটি করপোরেশনের সেবাগুলো আমি এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। আগে ওই এলাকার কোনো নাম ছিল না। আমি চারবারে ২১ বছর এলাকার কাউন্সিলর।

 

এলাকাবাসী ভালোবেসে ২০১২-১৩ সালের দিকে এলাকার নাম দেয় আনিছ নগর। এখন টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার বিলের কপিতেও আনিছ নগর এলাকার নাম লেখা থাকে। এই নাম আমি নিজে দেইনি।

 

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানান, কোনো এলাকা কিংবা সড়কের নামকরণ করতে গেলে সিটি করপোরেশনে আবেদন করতে হয়। এরপর তা উত্থাপন করা হয় করপোরেশনের নামকরণ উপকমিটির সভায়। কমিটি অনুমোদন দিলে তারপর করপোরেশনের সাধারণ সভায় ওই নামের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

 

পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে কার্যকর হয় সেই নাম। কিন্তু হাফিজ নগর ও আনিছ নগরের কোনো অনুমোদন নেই। স্থানীয় লোকজন হয়তো নাম দিয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে এই নামকরণের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।

 

একই কথা জানান কেসিসির নামকরণ উপকমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার এবং এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার।

 

ভোরের আকাশ/নি