logo
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:১৭
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শতাব্দী পেরোনো শুটকি মেলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শতাব্দী পেরোনো শুটকি মেলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে কয়েক শতাব্দী ধরে বসছে শুটকি মেলা। মূলত বাংলা নববর্ষের ২য় দিন থেকে কুলিকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছের এ শুটকি মেলা বসে। দুইদিনব্যাপী এ মেলার বিশেষত্ব হলো বিনিময় প্রথা। বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে শুটকি নিতে পারেন ক্রেতারা। গেলো বছরও বিনিময় প্রথায় শুটকি কেনাবেচা হয়েছে মেলায়।

 

তবে এবার শতাব্দী প্রাচীন বিনিময় প্রথা ভেঙে দিয়েছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হওয়া শুটকি মেলায় বিনিময় প্রথায় কোনো ক্রেতাই শুটকি কিনতে পারেনি। মূলত শুটকির দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের বিনিময়ে শুটকি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন এবার।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী কয়েক শতাব্দী ধরে কুলিকুন্ডা গ্রামে নিয়মিত শুটকি মেলা বসছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন শুটকি নিয়ে। মেলার প্রথম দিনে ভোর থেকে কয়েক ঘণ্টা বিনিময় প্রথায় শুটকি কেনাবেচা হয়। এরপর চলে নগদ টাকায় বেচাকেনা। মূলত বিনিময় প্রথায় নিম্নবিত্তরাই মেলা থেকে শুটকি নিতেন।

 

এবার পণ্যের বিনিময়ে শুটকি কেনাবেচা বন্ধ থাকায় নগদ টাকা দিয়েই ক্রেতাদের শুটকি কিনতে হচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছেন এমন একজন জানান, বাজারের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় শুটকি কিনতে পারেননি। তবে গরমের মধ্যেও মেলা নিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি।

 

কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, বিনিময় প্রথা শুধু ক্রেতাদের জন্য উপকারি মাধ্যমই ছিলো না, এটি মেলার ঐতিহ্য। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এবার সেটি ভঙে দিয়েছেন। প্রতিবছর প্রতীকি হলেও বিনিময় প্রথা চালু রাখার দাবি জানান তিনি। নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের শুটকি বিক্রেতা রামেশ্ব দাস জানান, তিনি এই মেলার অনেক পুরনো ব্যবসায়ী। প্রতিবছরই মেলায় আসেন শুটকি নিয়ে। এবার কাঁচা মাছের দাম বাড়ায় শুটকির দাম অনেক বেড়েছে।

 

তাই পণ্যের বিনিময়ে শুটকি বিক্রি করে পোষাবেনা বলেই এবার নগদ টাকায় শুটকি বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জ থেকে আসা আরেক বিক্রেতা আশিক মিয়া জানান, তীব্র গরমের মধ্যেও মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কমতি নেই।

 

এবারের মেলায় প্রায় ১ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এবারের মেলায় প্রায় দুইশ দোকান বসেছে। একেকটি দোকানে গড়ে প্রায় দেড়-দুই লাখ টাকার শুটকি কেনাবেচা হবে বলে আশা দোকানিদের। শনিবার সকাল থেকেই তীব্র গরম উপেক্ষা করে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে শুটকি মেলা। মূলত শুটকি মেলায় হাওরাঞ্চলের দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের শুটকি পাওয়া যায়।

 

মেলায় প্রতি কেজি নাইল্লা মাছের শুটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, বোয়াল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং বাইম মাছের শুটকি কেনাবেচা হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া এ বছর সামুদ্রিক কিছু মাছের শুটকিও এনেছেন দোকানিরা।

 

তবে এ মেলায় শুধু শুটকিই নয়, গ্রামীণ-লোকজ নানা পণ্যের পসরাও সাজিয়েছেন দোকানিরা। শিশুদের জন্য রয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। রয়েছে হরেক স্বাদের বাহারী খাবারও। বাংলা নববর্ষের ২য় দিন থেকে শুরু হয়ে দু'দিন ধরে চলা শতবর্ষী প্রাচীন এই শুটকি মেলাটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে না, পুরো নাসিরনগরে তখন সৃষ্টি হয় এক আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশ। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষজন আসে।

 

এমনকি এসময়টাতে শুটকি মেলায় অংশ নিতে স্বামীর বাড়ি থেকে এলাকার অনেক মেয়েরা বাপের বাড়িতে বেড়াতে চলে আসে।

 

ভোরের আকাশ/নি