logo
আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৩৭
‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা' জারি হতে পারে 
শাহীন রহমান

‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা' জারি হতে পারে 

শাহীন রহমান: অব্যাহত তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ এপ্রিল থেকেই আবহাওয়া অফিস ‘তাপপ্রবাহে সতর্কতা’ জারি করেছে। ঢাকায় রোববার ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু ঢাকায় নয়, শনিবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

দেশের তাপমাত্রা যখন দিন দিন বাড়ছেই তখন সরকারও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাপমাত্রার তীব্রতা অব্যাহত থাকলে সরকার ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করতে পারে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বাড়বে। এরপরই হয়তো তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতে পারে।

 

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাবউদ্দিন বলেছেন, তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা যায় কিনা। এজন্য সোমবার পর্যন্ত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাপমাত্রা যদি এরপরও বাড়তে থাকে, তবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে। রোববার তাপমাত্রা আরো বেড়েছে। রাজধানীর তাপমাত্রা বিগত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

 

যদিও আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আরো তিন দিন রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এই তিন দিন পরই তাপপ্রবাহ স্তিমিত হয়ে আসতে পারে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, আকাশে মেঘের আনাগোনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ১৮ এপ্রিলের পর মেঘের এই আনাগোনা আরো বেড়ে যাবে। এর পরই হয়তো বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। তিনি জানান, দেশের তাপমাত্রা এ মুহূর্তে আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। তিন দিন পরই দাবদাহ স্তিমিত হতে শুরু করবে বলে তিনি জানান।

 

এদিকে এবার বৈশাখের শুরুতেই প্রচন্ড রোদে প্রকৃতি যেন আরো তপ্ত হয়ে উঠছে। বাতাসে আগুনের স্ফুলিঙ্গের অনুভব বেড়ে যাচ্ছে। রোদের তাপের উত্তপ্ততা এত বেশি বাড়ছে যে, এর জ্বালায় গায়ে ফোস্কা পড়ার জোগাড়। দিনদুপুরে রাস্তায় বেরিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

 

যদিও ঋতুবৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী বৈশাখের প্রকৃতি উত্তপ্তই থাকে। কিন্তু তীব্র দাবদাহে এর তীব্রতা বেড়ে গেছে অনেকগুণ। তারা জানায়, আগামী দুই-তিন দিন গরম কমার সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুর ইসলাম বলেন, আগামী দুই দিন সারা দেশে গরম কমার সম্ভাবনা নেই। রাজধানী ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। দুই দিন পরে সিলেট অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, সাধারণত কোনো এলাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়। সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েও অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

 

এদিকে দেশে যখন চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদাহ, প্রচন্ড তাপে জনজীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। মানুষের অবস্থা নাকাল। ৫-৬ দশকের রেকর্ড ভাঙছে তাপমাত্রা। এ অবস্থায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সংকট মোকাবিলায় ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি হতে পারে।

 

২০১৪ সালের এপ্রিলে রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শনিবার তাপমাত্রা ঠেকেছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ‘অতি তীব্র’ তাপমাত্রা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। রোববার এই তাপমাত্রা আরো বেড়ে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ফলে রাজধানীর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

 

আবহাওয়া অফিস জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

এ সময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তারা জানায়, দেশের আট জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এদিকে আবহাওয়া এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এদিকে টানা তীব্র গরমে মানুষের ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর পেটের পীড়াসহ না রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তীব্র গরমে যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। রেলের গতি কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই। প্রচন্ড গরমে রাজশাহীতে জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগী বাড়ছে।

 

মূলত পানির কারণেই এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। হেপাটাইটিস ও জন্ডিস রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

ভোরের আকাশ/নি