ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুমুক্ত করতে মুন্সীগঞ্জে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৪৮টি স্থানে নির্মিত হচ্ছে কংক্রিটের সেতু। ওই স্থানগুলোতে থাকা ৪৮টি পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু অপসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬টি সেতুর কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাকি দুটি সেতুর নকশা সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ হলে এই জেলাকে বেইলি সেতুমুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর মধ্যে মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কে ১০টি, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় হতে রামপাল হয়ে মুন্সীগঞ্জ সড়কে ১১টি, মুন্সীগঞ্জ হতে শ্রীনগর সড়কে ৮টি সেতুসহ ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার এলাকায় মোট ৪৬টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কের বালিগাওঁ বাজার এলাকার তালতলা গৌরগঞ্জ খালের উপরে ৯৮ মিটার লম্বা ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত সেতুর নিচের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সংযোগস্থলে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে মাওয়ার সঙ্গে মুক্তারপুর সংযোগ সড়কটি দিয়ে সহজেই পদ্মা সেতু হয়ে পারাপার হতে পারবে যানবাহন।
লৌহজং উপজেলার কাজের পাগলা এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বালিগাঁও খালের উপরে আগে স্টিলের ব্রিজ ছিল। একটা গাড়ি এই ব্রিজ দিয়ে গেলে আরেকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত। তাই ব্রিজের গোড়ায় যানজট লেগেই থাকত। এখন কংক্রিটের ব্রিজ হইতেছে। এখন আর এখানে যানজটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হইব না।
এ বিষয়ে বাসচালক মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, ‘স্টিলের সেতুর কারণে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হতো। স্টিলের সরু সেতু দিয়ে একটা গাড়ি গেলে আরেকটা গাড়ি যেতে পারত না। তাছাড়া মাঝে মাঝে স্টিলের সেতুতে গাড়ি ফেঁসে যাইত। সেতুর পাটাতন মাঝে মধ্যে ভাইঙ্গা যেত, এজন্য আমরা ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারতাম না। এখন মোটা সেতু হইতেছে আর সমস্যা হইব না।’
এদিকে মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কের বলই এলাকায় অপর একটি বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিটের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেখানকার ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বর্ষার আগেই সেতুর নিচের কাজ শেষ করতে চাই। দ্রুত গতিতে সেতুর কাজ চলছে। ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে।
এদিকে দিঘিরপাড় সিপাহিপাড়া সড়কের পুড়া বাজারের পাশের বেইলি সেতুর স্থলে ক্রংকিটের সেতু নির্মাণকাজ করছে আরপি কনস্ট্রাকশন। সেতুটির নিচের পাইলিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে দ্রæতগতিতে কাজ চলছে ওই সেতুতে।
স্থানীয় মো. আসলাম বলেন, এখানে আগে স্টিলের সেতু ছিল। দুই বছর আগে ওই সেতুটি দিয়ে গাছ বোঝাই ট্রাক পার হওয়ার সময় ট্রাকসহ সেতুটি ভেঙে পড়ে যায়। পরে সেতুর স্থানে থাকা ফাঁকা জায়গায় কোনো ধরনের সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড না থাকায় এখানে গাড়ি নিয়ে পড়ে ২ জন মারাও গেছে।
পরে ভেঙে যাওয়া বেইলি ব্রিজের পাশে আরেকটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও সরু সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ট্রাক ও বাসসহ অন্যান্য যানবাহন। এখন কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। মানুষের আর কোনো সমস্যা হবে না। ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারবে।
আরপি কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান মোট ১০টি সেতুর কাজ করছে। এর মধ্যে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পুড়া বাজার, শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িপাড়া ও সবুরাকান্দি এলাকার ৩টি সেতু দেখভালের দায়িত্বে আছি আমি। ইতোমধ্যে এই সেতু ৩টির পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
খিদিরপাড়া, বালিগাঁও ও বলই সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার আয়নাল হোসেন বলেন, আমরা মাওয়া হতে টঙ্গিবাড়ী হয়ে মুক্তারপুর সড়কে ৩টি সেতুর নির্মাণকাজ করছি। এর মধ্যে লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া এলাকার খালের উপরে ৪০ মিটার লম্বা ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত, বালিগাঁও খালের উপরে ৯৮ মিটার লম্বা ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত সেতু দুটির নিচের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বলই এলাকার ৩৪ মিটার লম্বা সেতুর নিচের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। আমরা বর্ষা আসার আগেই এই কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপ-প্রকৌশলী ফাহিম রহমান খান বলেন, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কে ১০টি সেতু, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় হতে রামপাল হয়ে মুন্সীগঞ্জ সড়কে ১১টি সেতু, মুন্সীগঞ্জ হতে শ্রীনগর সড়কে ৮টি সেতুসহ ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার এলাকায় মোট ৪৬টি সেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে এসব সেতুর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে।
ভোরের আকাশ/নি