তীব্র গরম আর টানা দাবদাহে জনজীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠছে। ঠিক সেই মুহুর্তে তাপমাত্রার পারদ আরও উপরে উঠছে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। আগের দিন রোববার চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা কিছুটা কমলে সোমবার তা আরও বেড়ে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে গেছে। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ওভার অল তাপমাত্রার এর চেয়ে আর বাড়বে না।
এদিকে রাজধানীর ঢাকা তাপমাত্রা একদিনের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি। গত রোববার ঢাকায় সৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলে সোমবার তা কমে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। একই সঙ্গে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এখন ভ্যাপসা গরম অনুভুতি হচ্ছে। গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে।
আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, এই মৌসুমে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায় উঠেছে। তাপমাত্রা এর বেশি ওঠার আশঙ্কা নেই। তবে তিনি জানান, আগামী শুক্র-শনিবারের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিচ্ছিন্ন ভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে। তখন গরমের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানান, বৈশাখে তপ্ত রোদে যখন সারাদেশ পুড়ছে। সূর্যতাপে বাইরে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। ঠিক সেই মুহুর্তে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে ভ্যাপসা গরমে মোড় নিয়েছে পরিবেশ। ফলে সামান্য গরমে গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। তবে সারাদেশে দাবদাহ অব্যাহত থাকলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশে মেঘের আনাগোনা গেছে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে। আদ্রতার মাত্রা আরও বেশি বেড়ে আগামী শনিবার নাগাদ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার তাপমাত্রার পারদ আর বেড়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটা ঈশ্বরদীর স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অপর দিকে একদিন কমে চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আবারও বেড়েছে। গত শনিবার এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রোববার তা কমে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। সোমবার আবার বেড়ে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়।
চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় একটানা প্রায় দুই সপ্তাহ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অতীতে কখনও একটানা এভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়নি এ জেলায়। তীব্র দাবদাহে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে। এদিকে, তীব্র গরমে মাঠে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসলে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। এদিকে প্রচণ্ড খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে দেশের অনেক জায়গায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীর আকাশে অবশেষে মেঘ আসতে শুরু করেছে। ভারত থেকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর দিয়ে ওই মেঘ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত রোববার থেকে ওই মেঘ আসা শুরু হয়ে তা ভেসে ভেসে ঢাকা পর্যন্ত চলে এসেছে। মেঘের কারণে রোদের কিরণ রাজধানীর বুকে আসতে বাঁধা পাচ্ছে। এজন্য গত ১০ দিন পর রাজধানীর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকার তাপমাত্রা গতকালের তুলনায় একলাফে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। দুপুর ১২টায় রাজধানীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন একই সময়ে ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, ঢাকার তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করেছে। তবে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরমের অনুভূতি খুব একটা কমবে না। আকাশে মেঘ ও আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে ঘাম বেড়ে যেতে পারে। তাই বেশি সময় রোদের মধ্যে না থাকাসহ দাবদাহের সময় যেসব পরামর্শ মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে, তা মানতে হবে। আগামী দুই এক দিন তাপমাত্রা কমলেও দাবদাহ রয়ে যাবে। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও দাবদাহ আজও অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকায় তাপমাত্রা কমলেও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাপ ছিল ৪৮ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আগের দিন একই সময়ে আর্দ্রতার পরিমাপ ছিল ২৩ শতাংশ। ফলে তাপমাত্রা কমলেও গরমের অস্বস্তি খুব একটা কমেনি। বরং রাজধানীবাসীর মধ্যে ঘাম বেড়ে গিয়ে কষ্ট বেড়েছে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এ অবস্থায় রাতের বেলাও ঘাম বাড়তে থাকবে।
ভোরের আকাশ/আসা