logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১৭
৫ সিটি নির্বাচন
দলীয় কঠোরতা উপেক্ষা করে প্রার্থী হতে তৎপর বিএনপি নেতারা 
এম. সাইফুল ইসলাম

দলীয় কঠোরতা উপেক্ষা করে প্রার্থী হতে তৎপর বিএনপি নেতারা 

এম. সাইফুল ইসলাম: আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিতে দলীয় কঠোরতার মধ্যেই বিএনপির অনেকে এখনো প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দলীয়ভাবে অংশ না নিয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান। কেন্দ্র কঠোর বার্তা দিলেও অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার আভাস দেয়ায় খোদ দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

 

নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে দলে বিভক্তি ও নানা সন্দেহ সৃষ্টি হবে। তাই যারা আসন্ন সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ভোট করতে চাইছেন, তাদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থার নেয়ারও দাবি তাদের।

 

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে। দলটি বর্তমান ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির সংলাপ, ইসি নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম না দেয়াসহ কোনো কর্মকান্ডে অংশ নেয়নি। চলমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর বিএনপি আলোচনার জন্য চিঠি দিলে দলটি তাতে সাড়া দেয়নি।

 

এই ইসির অধীনে স্থানীয় বা কোনো সংসদ উপ-নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও বেশ আগেই নিয়েছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি যখন রাজপথের কর্মসূচিতে ঠিক সে সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের নয় মাস আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

 

বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যেন ভোটে অংশ না নেয়, সেটিই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গত ৩ এপ্রিল ইসি সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিলে আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় চাওয়া থেকে সরে এসে বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেন।

 

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গত সপ্তাহে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে যান। সেখান থেকে তিনি রোববার দেশে আসেন।

 

দেশে ফিরে আরিফুল হক নির্বাচনে অংশ নেয়ার ‘আভাস’ দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তিনি বলেছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি দলের সিগন্যাল পরিষ্কার করবেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র ভোট করবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

 

বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। দলে পদে না থাকলেও তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া যায় না। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি ভোট করতে চান। বরিশালে বিএনপিদলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

গাজীপুরে প্রার্থী হবেন দলীয় নেতা নূরুল ইসলামের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম। এছাড়া রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে দল নির্বাচনে না এলে তিনি ভোট করবেন না বলেও জানিয়েছেন। রাজশাহীতে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন রিমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

 

সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ নির্বাচনে বিএনপির কৌশল কী হবে, তা নিয়েও সেখানে বিস্তারিত আলাচেনা হবে বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কার করা হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া সিটি নির্বাচন থেকে নেতাকর্মীদের মনোনিবেশ দূরে রাখতে নির্বাচনের সময়জুড়ে পাঁচ সিটিতে কর্মসূচিও আসতে পারে বৈঠক থেকে।

 

এদিকে, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বিএনপির যে দৃঢ় অবস্থান, তা থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে নেতাদের অংশ নেয়ার আগ্রহে ক্ষুব্ধ দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিলে বা অংশ নেয়ার পক্ষে মৌন সমর্থন করলে দলটির নেতাদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হবে।

 

দলের সাধারণ নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে। তৈরি হবে সন্দেহ। সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈধতা দেয়া নিয়ে দলে যে অস্বস্তি, সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল আবারো তার পুনরাবৃত্তি হবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাই সিটি নির্বাচনে যদি কেউ অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি নেতাকর্মীদের।

 

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি এখন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প কিছু ভাবছে না।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়া। আমরা মনে করছি না কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে যাবে। যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে দল।

 

ভোরের আকাশ/নি