logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৫২
এ যেন গলার কাঁটা
৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুতে উঠতে লাগে আরেক সেতু
বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ

৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুতে উঠতে লাগে আরেক সেতু

কালিগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত সেতু। লোহার মই দিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের

প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর এলাকার কালিগঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি এখন যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটি হওয়ার পূর্বে কষ্ট করে হলেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে আসা-যাওয়া করা যেত। কিন্তু সেতুটি হওয়ার পর থেকে সেটাও বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে বেশিরভাগ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বয়স্কদের।

 

যদিও সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র সংযোগ সড়কের অভাবে মাঝ নদীতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে কোটি টাকার এই সেতু। নির্মাণের প্রায় দুই বছর পরো সুফল পাচ্ছে না উপজেলাবাসী। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করতে বাজেট প্রেরণ করা হয়েছে।

 

জানা যায়, দৌলতপুর ও পার্শ্ববর্তী নাগরপুর উপজেলার মানুষ ও কৃষকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রায় দুই বছর আগে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে কালিগঙ্গা নদীর ওপরে ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭.৩ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংযোগ সেতু নির্মাণের বাজেট না থাকায় শুধুমাত্র সেতুটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সংযোগ সড়ক না থাকায় এবং নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেতুর নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।

 

অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে লোহার মই দিয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে হচ্ছে মানুষকে। সংযোগ সড়ক না থাকায় দশ মিনিটের রাস্তার জন্য ঘুরে আসতে হচ্ছে দেড় ঘণ্টায়। এতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কৃষকরা। সেতুটি ব্যবহার না হওয়ায় সেতুর ওপরে শস্য শুকাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

 

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার নদীর ওপরে ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭.৩ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সংযোগ রাস্তা নির্মাণের জন্য ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বরাদ্ধ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তালুকনগর এলাকার হাসেম আলী জানান, নদী পার হলেই বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা আছে। মানুষজন হাট-বাজারে যায়, ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যায়।

 

সবার মনে আশা ছিল, সেতু হলে সবাই হাসি-খুশিতে আসা-যাওয়া করতে পারবো। রিকশা, ভ্যান ও রোগীদের গাড়ি যেতে পারবে। এতে করে সবার উপকার হবে। কিন্তু সেটা আর হলো না, মনের আশা মনেই রইল। সেতু হইছে কিন্তু রাস্তার কারণে সেতুতে উঠতে পারি না।

 

স্থানীয় মজিদ হোসেন জানান, সেতু তো আমাগো কোনো কাজে আহে না। সড়ক নাই, অহন সেতু দিয়া মানুষ ক্যামনা পার অয়ব। মই দিয়া ব্রিজে উঠতে অয়। সরকার যদি মাটি ফালাইয়া বর্ষা মাসের আগে কোনো ব্যবস্থা না করে, তয় এতো ট্যাকার সেতু কোনো কাজে আইব না। কৃষক আবুল মিয়া জানান, সেতু দিয়া আমরা আমাগো কৃষি ফসল নিতে পারিনা।

 

এইখান দিয়া আমাগো কৃষি ফলন হাট বাজারে নিমু ক্যামনে। সেতুর মতন সেতু খাড়াইয়া রইছে আমাগো কষ্ট আর দুর অয়ল না। যদি রাস্তা অয় তখন আমাগো কষ্ট লাঘব অয়ব। স্থানীয় আমেনা বেগম জানান, মাঝেমধ্যে শুনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার, ইউএনও, চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকজন আইস্যা দেইখা যাইতেছে। কিন্তু আমাগো কাজ তো হইতেছে না। সেতুটি হওয়ার আগে তো বাঁশের পুল দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারতাম। এখন তো সেই কামও বন্ধ হইয়া গেছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পোলাপান নিয়ে খুব বিপদে আছি আমরা।

 

স্থানীয় তালুকনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম লালন জানান, সেতুতে উঠার জন্য মাটি না থাকায় গত বর্ষায় ঠিকাদারের কাজের লোহার পাত দিয়ে মই বানিয়ে লোকজন সেতু দিয়ে পার হয়েছে। আর শুষ্ক মৌসুমে ব্রিজের নিচ দিয়ে আসা-যাওয়া করছে মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় রয়েছে সেতুটি। সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়কের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী, ইউএনও, চেয়ারম্যানকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু কাজ হয় নাই।

 

উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইরাজ উদ্দিন দেওয়ান বলেন, স্থানীয়দের চাহিদা ও গুরুত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তালুকনগরের কালিগঙ্গা নদীর ওপরে একটি সেতু নির্মান করা হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচল করা যাচ্ছেনা। তাই সংযোগ সড়কের জন্য ৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকার বাজেট চেয়ে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। বাজেট বরাদ্ধ হলে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।

 

ভোরের আকাশ/নি