logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:২৫
পুঁজিবাজারে খরা
ঈদ উৎসব দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

ঈদ উৎসব দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কালেভদ্রে সূচক ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। আবারও আগের ধারায় ফিরে যাচ্ছে বাজার। যার জের ধরে ক্রমাগতভাবে কমছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর। যে কারণে ভালো নেই বিনিয়োগকারীরা। ঈদেও প্রশান্তি মিলছে তাদের।

 

খুশির এ উৎসবের আগেও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের। অনেক বিনিয়োগকারী দিনের পর দিন তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। সন্তানের জন্য কষ্টে পোশাক কিনতে পারলেও ঈদের সার্বিক খরচ জোগাড় করা নিয়েই শঙ্কায় তারা।

 

ভুক্তভোগি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মাসের পর মাস বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন একটি কোম্পানি বে-লিজিং। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ার কিনে টাকা আটকে গেছে বিনিয়োগকারী মো. আবুর।

 

এই বিনিয়োগকারী বলেন, গত বছরের জুনে বে-লিজিংয়ের শেয়ার কিনি। এরপর আর বিক্রি করতে পারিনি। লোকসানে ছয় মাস ধরে প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। একই অবস্থা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। সব টাকা পুঁজিবাজারে আটকে গেছে। এ অবস্থায় ঈদের আনন্দ করবো কীভাবে?

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, রোজার ভিতরে শেয়ার বিক্রির একটা চাপ থাকে। কিছু বিনিয়োগকারী আছেন শেয়ার বিক্রি করে ঈদের খরচ মেটান। এ কারণে স¤প্রতি শেয়ারবাজারে বিক্রির একটা চাপ ছিল। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। তবে এখন বিক্রির চাপ কমে আসছে। আমাদের ধারণা সামনে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে। বিনিয়োগকারীরা সবসময় একটি ভালো পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা করেন। ঈদের সময় তাদের প্রত্যাশা আরও বেশি থাকে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ভোরের আকাশকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের ঈদ ভালো যাচ্ছে না। এবারও তাই হবে। এর প্রধান কারণ বাজার ভালো না থাকা।

 

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে এমন কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যাদের মেয়ার ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু নেই। তারা সংসার চালান পুঁজিবাজারের ইনকাম থেকে। ফলে বাজার ভালো না থাকলে তাদের চিন্তা আরও বাড়ে। ঈদ বা পুজা সময় বাজার খারাপ থাকলে তাদের সমস্যা আরও দীর্ঘ হয়।

 

জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছি। কিন্তু সামনে ঈদের অনেক খরচ বাকি। এসব খরচের টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবো সব সময় সেই চিন্তা করি। প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না। বাজার ভালো থাকলে আমাদের এসব নিয়ে চিন্তা করতে হত না। ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজারের অবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে আমাদের ঈদ উৎসব অনেকটাই বিবর্ণ।

 

বাজারে এখন অনেক শেয়ারেরই ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যাদের কাছে এ ধরনের শেয়ার রয়েছে তারাই পড়েছেন বেশি সমস্যায়। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বে-লিজিংয়ের একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। ৬ এপ্রিল মাত্র ৩০টি শেয়ার লেনদেন হয়।

 

এরপর ৯ এপ্রিল একটি, ১১ এপ্রিল ৬১টি এবং ১৬ এপ্রিল ৩০০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অথচ প্রতিদিন লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ারের বিক্রির আদেশ আসছে।

 

ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার প্রায় এক বছর ধরে কাঙ্খিতদরে বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে খুবই কম সংখ্যক শেয়ার।

 

শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বে-লিজিং নয়, তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের বর্তমানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এখন লেনদেন হচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বাকিগুলো দিনের পর দিন বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের প্রতিক্ষা কেবলই বাড়ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি