logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:৩৮
সম্পাদকীয়
ফুটবল ফেডারেশনের আরো স্বচ্ছ থাকা জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুটবল ফেডারেশনের আরো স্বচ্ছ থাকা জরুরি

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদককে বিধি ভঙ্গের দায়ে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব ধরনের কর্মকান্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফা। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

 

সাধারণ সম্পদককে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ টাকা) জরিমানা করেছে ফিফা। এর আগে দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি কার্যক্রম চালিয়েছে সংস্থাটি। চারটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ধারা-১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ধারা-১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ধারা-২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) এবং ধারা-২৮ (তহবিল তছরুপ ও অপব্যবহার)।

 

এর মধ্যে প্রথম তিনটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিফার স্বাধীন এথিক্স কমিটির বিচারিক চেম্বার। যেসব অনিয়মের জন্য সাধারণ সম্পাদকের এই শাস্তি, সব কটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে।

 

গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফিফার সদর দপ্তরে হয় শুনানি। তবে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় অবাক হননি বাফুফে সভাপতি। এথিক্স কমিটির যে সিদ্ধান্ত সেটি তার মতে সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এটা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক কোর্ট অব অরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে যাবেন বলেও তিনি জানান।

 

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তখনই ক্ষুণ্ণ হয়েছিল যখন মাত্র ৬৬ লাখ টাকার অভাবে প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে এশিয়ান অঞ্চলের বাছাই খেলতে মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি বাফুফের পক্ষে। নিয়মানুযায়ী ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ খরচের নির্দিষ্ট কিছু খাত আছে। এই অর্থ নির্দিষ্ট একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখাটা ফিফার নিয়মে বাধ্যতামূলক। লেনদেনও শুধু সেখান থেকেই করার নিয়ম।

 

ফিফার তদন্তে এখানেই বড় দাগে তিনটি অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর মধ্যে আছে ফিফার তহবিলের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নগদে উত্তোলন করা, ফিফা সম্পর্কিত প্রকল্প বা প্রোগ্রামে অন্য অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার এবং ফিফা তহবিলের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা।

 

ফিফা নৈতিকতা বিষয়ক কমিটির ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার বেশ কিছু লেনদেন বিশ্লেষণ করে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪ মার্কিন ডলার লেনদেনে আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এটি যাচাইকৃত লেনদেনের ১৭.৭৩ শতাংশ।

 

এটিকে কোনোভাবেই তুচ্ছ বিবেচনা করা যায় না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ফিফার রায়ের কোথাও সভাপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তবু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রশ্নটা উঠে আসে যে, বাফুফে সভাপতির প্রশ্রয় না পেলে এত অনিয়মের জঞ্জাল কীভাবে জমা হয়! বাফুফে সভাপতি হিসেবে এটা তো তার জন্য বড় এক প্রশাসনিক ব্যর্থতা।

 

কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না তিনি। মাত্র ছয় মাস আগে ফুটবলে বাংলার বাঘিনীরা উৎসবে ভাসিয়েছিলেন দেশের মানুষকে। বিজয়ী মেয়েদের ছাদখোলা বাসে দেয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। লাখো মানুষের ভালোবাসায় হয়েছিলেন অভিসিক্ত। কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী নারী দলটিকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনা দিয়েছে। আর্থিকভাবেও পুরস্কৃত করা হয়েছে।

 

অথচ বাফুফের দুর্নীতি ও অনিয়মের বেড়াজালে নিজ দেশের মাটিতেই যথাযথ সম্মান পেল না সাফ বিজয়ী নারী ফুটবল দল। এ লজ্জা শুধু তাদেরই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বাংলাদেশের। এর যথাযথ বিচার ও তদন্ত একান্ত প্রয়োজন।

 

ভোরের আকাশ/নি