শাহীন রহমান: টানা ১৯ দিনের দাবদাহ শেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে এ স্বস্তি স্থায়ী হচ্ছে না। আগামী সপ্তাহে আবারো ফিরছে দাবদাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২০ এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও কোথাও কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে গেছে। এ কারণে তাপমাত্র কমে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বুধবার পর্যন্ত এ স্বস্তি থাকবে। এরপরই আবহাওয়ার পরিবর্তন শুরু হবে। বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী দিনে তাপমাত্রা বাড়লেও দাবদাহ আগের অবস্থায় যাবে না। এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে বজ্রপাতের ঝুঁকিও।
আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। গত ২৩ এপ্রিল দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি উপজেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু হয়। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ওইসব এলাকায় আকাশে মেঘ করে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাত শুরু হয়। হাওরে বোরো ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় বৃষ্টির আগেই ফসল তুলতে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন কৃষক। তারা মূলত নিজ নিজ হাওর এলাকায় ধান কাটার সময় কিংবা গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলে এবং মেঘ অনেক উঁচুতে অবস্থান করলে এবং ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলে বজ্রপাতের ঝুঁকিও থাকে। সাধারণত বছরের এ সময় বজ্রপাতের মৌসুম হওয়ায় বজ্রপাতের ঝুঁকি এবার অন্যবারের চেয়েও বেশি বলে জানান তারা।
এবার দেশে চৈত্রের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। কিন্তু মধ্য চৈত্রে এসে আবহাওয়ার আচরণ পাল্টাতে থাকে। তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে চরম আকার ধারণ করে। সারা দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে দাবদাহ। তাপমাত্রা উঠে যায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সারা দেশে সূর্যের তীব্র উত্তাপে নাভিশ্বাস উঠছিল সবার মধ্যে। বিচ্ছিন্ন বৃষ্টির কারণে হাঁসফাঁস গরম থেকে আপাতত কিছুদিন রেহাই মিলেছে। রাজধানীতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলেও তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমেছে। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় বরিশালে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্র প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় এখন সর্বত্র স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে এ স্বস্তি ক্ষণস্থায়ী হচ্ছে। আবার তাপমাত্রা বেড়ে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা কমে আজ থেকে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়বে।
আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। তিন দিনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, মঙ্গলবার (আজ) থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকবে। আর বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।
এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার বজ্রপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ নাজমুল দেশে এপ্রিল থেকে জুনের প্রথম ভাগকে বজ্রপাতের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। বছরের এ সময়ে আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অনেক জলীয়বাষ্প তৈরি হয়। এ জলীয়বাষ্পই বজ্রপাতের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। জলীয়বাষ্প যত বেশি হবে তত বেশি বজ্র মেঘের সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন বজ্রপাত দেখা দেয়।
তিনি বলেন, একদিকে অনেক গরম আবহাওয়া; অন্যদিকে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে ভূপৃষ্ঠের গরম বাতাস ওই জলীয়বাষ্পকে ওপরে ঠেলে দেয়। তখন এটি ওপরের শীতল বাতাসের সঙ্গে মিলে সঞ্চালিত মেঘমালা তৈরি করে। এ মেঘের ভেতরে অনেক চার্জ থাকে। সেখানেই আলোর ঝলকানি দিয়ে বজ্রপাত হয়। এ কারণে এ সময়ে আকাশে কালো মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলেই সবাইকে সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গা ছেড়ে দ্রুত নিরাপদে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
ভোরের আকাশ/আসা