কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র জনচলাচল ও মালামাল পরিবহনে একটা সময় গরুর গাড়ির বিকল্প কোনো যানবাহন ছিল না। শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে এ অঞ্চলের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবহন ছিল গরুর গাড়ি। কালের আবর্তে এবং বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ওই পরিবহন গরুর গাড়ি এখন প্রায় হারিয়ে গেছে বললেই চলে।
জেলার দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান প্রযুক্তির আধুনিক সভ্যতার যুগে যন্ত্রচালিত লাঙ্গল, পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর-পিকআপসহ নানা যন্ত্রের পরিবহন বাজারে আসার ফলে বিলুপ্তি দিকে চলে যায় গরিবের পরিবহন গরুর গাড়ি। কৃষি ও কাঁচামালের প্রসিদ্ধ বাজার এবং বাণিজ্যিক নগরীখ্যাত বৃহত্তর লাকসামের প্রিয় শহর দৌলতগঞ্জ উত্তর বাজার, নোয়াখালী রেলওয়ে লাইনের পাশে ও পূর্ব বাজারে সারি সারি গরু গাড়ি অবস্থান করত। জেলা দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলোর সবকটি গ্রামের লোকজনের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল দু’চাকার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এ অঞ্চলের বর্তমান বিত্তশালী পরিবারের অনেকেই এ গরু গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।
সূত্রগুলো আরো জানায়, এককালের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরু গাড়ি বর্তমান প্রযুক্তির কাছে হেরে গিয়ে আজ বিলুপ্তির দিকে। নতুন নতুন প্রযক্তির পরিবহন আসায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে গরু গাড়ি প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করে চলেছিল। নব্বই দশকের পর থেকে ওইসব গরুর গাড়ি ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে চলে গেছে। প্রযুক্তির যুগে পরিবর্তনে হারিয়ে যায় গ্রামবাংলার এ বাহন। এ অঞ্চলে ২-৪ মাস ঘুরেও একটি গরু গাড়ির খোঁজ কোনো এলাকায় পাওয়া যাবে না। সে কারণে শহর কিংবা গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে গরুর গাড়ি শব্দটির সঙ্গে আজ পরিচিত নয়।
গরুর গাড়ি মালিকদের পরিবারের একাধিক নতুন প্রজন্ম সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত এ অঞ্চলের জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বাপ-দাদা ও তারও আগের উত্তরসূরিরা গরুর গাড়ি চালিয়ে জীবনজীবিকা নির্বাহ করতেন। বিশেষ করে গরুর গাড়ি বাহনটি দুই কাঠের চাকাবিশিষ্ট ও দু’আবাল গরু কিংবা বলদ গরু দিয়ে টানা এক ধরনের বিশেষ যান ছিল। এ যান লম্বা বাঁশ কিংবা মোটা কাঠের জোয়ালের সাথে বড় বড় চাকা দুটো যুক্ত থাকত। আর গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরুর জুটি মিলে এ গাড়িটি টেনে নিত গন্তব্য স্থানে। ওই গাড়ির চালক লম্বা ছিবা হাতে বসে থাকতেন সামনে। আর পেছনে বসত যাত্রী কিংবা বোঝাই থাকত নানা মালামাল। অপরদিকে বৃষ্টির দিনে গাড়িজুড়ে ছাউনি দেয়া থাকত। বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে গরু গাড়ির প্রচলন ছিল তৎকালীন সময়ে ব্যাপক আকারে। এ ছাড়া বিয়ের বর-কনে উভয়ের স্বজনরা চলাচলের একমাত্র বাহন গরু গাড়ি ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান যেন কল্পনাও করা যেত না।
ভোরের আকাশ/আসা