বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘরে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যাপারে নতুন শর্ত আরোপ করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। প্রবেশ ও বের হওয়া নিয়ে হঠাৎ বিশেষ শর্ত আরোপে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের সাথে প্রতিদিনই কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রবেশ করতে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জনপ্রতি ৫০ টাকার টিকিট ফি রাখেন এবং জাদুঘরে প্রথম (১নং) ও দ্বিতীয় (২নং) গেট দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীরা তাদের সুবিধামতো প্রবেশ এবং বের হতে পারতেন। এখন আগত দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বের হতে দেখা যায় উল্টো চিত্র।
গত কয়েকদিন ধরে সোনারগাঁ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সেই প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করে দিয়েছে। সোনারগাঁ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাদুঘরের ১নং গেট অর্থাৎ মেইন গেট দিয়ে ৫০ টাকা টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে এবং ২নং গেট দিয়ে বের হতে হবে। জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ রকম নিয়ম ছিল না। হঠাৎ সোনারগাঁ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এমন শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীরা।
সোনারগাঁ জাদুঘরে ঘুরতে আসা কিছু দর্শনার্থী জানান, জাদুঘরের ১নং অর্থাৎ মেইন গেটের সাথে রয়েছে কার পার্কিং জোন, সেজন্য তারা পূর্বে ১নং অর্থাৎ মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং একই গেট দিয়ে বের হতেন কিংবা ইচ্ছামতো দ্বিতীয় ২য় গেট দিয়েও প্রবেশ ও বের হতে পারতেন। এখন সোনারগাঁ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কারণে ১নং গেট দিয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করলেও এই গেট অর্থাৎ মেইন গেট দিয়ে বের হতে পারছেন না। ফলে দ্বিতীয় গেট দিয়ে বের হয়ে রিকশা করে প্রথম গেটে আসতে হয়। এতে আগত দর্শনার্থীদের অর্থ ও সময় উভয়ই ব্যয় হচ্ছে।
সোনারগাঁ জাদুঘরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী তানিয়া রেজা জানান, তারা ঈদের ছুটিতে জাদুঘরে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন। তারা ১নং অর্থাৎ মেইন গেটের সাথে কার পার্কিং জোনে গাড়ি পার্কিং করে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। জাদুঘর দর্শন করে বেলা শেষে তারা ১নং গেট অর্থাৎ মেইন গেট ব্যবহার করে বের হয়ে গাড়িতে উঠবেন কিন্তু মেইন গেটে আসার পর আনসার বাহিনী তাদের পথ গতিরোধ করে এবং বের হওয়ার জন্য ২য় গেট ব্যবহার করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ২য় গেট দিয়ে বের হতে হলে আবার অনেক পথ হাঁটতে হবে। তার ছোট ছোট দুই ছেলে তামিম ও সাফওয়ানকে নিয়ে প্রথম গেট থেকে দ্বিতীয় গেট পর্যন্ত ক্লান্ত শরীর নিয়ে হেঁটে যেতে হবে। অতঃপর ২য় গেট দিয়ে বের হয়ে অনেক দূর রিকশা কিংবা হেঁটে প্রথম অর্থাৎ মেইন গেটের সামনে কার পার্কিং জোনে আসতে হবে। এতে তার পরিশ্রম ও অতিরিক্ত অর্থ উভয়ই নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই যেখানে কার পার্কিংয়ের সাথের গেট ব্যবহার করতে দেয়া হয় না এবং দেশের যেকোনো বিনোদন কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। সোনারগাঁ জাদুঘরের পাশে বসবাসরত স্থানীয়রা জানান, সোনারগাঁ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ রকম মনগড়া নিয়ম পূর্বপুরুষ থেকেও শোনেননি এবং তারাও কখনো দেখেননি। নতুন পরিচালক এসে নতুন নতুন নিয়মকানুন চালু করছেন। প্রবেশ ও বের হওয়ার নতুন নিয়মকানুনের জন্য প্রতিদিনই নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে দর্শনার্থীদের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। যা দর্শনার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম বিধিনিষেধের কারণে দর্শনার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন্ন হচ্ছেন। যার প্রভাবে সোনারগাঁ জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাবে। সরকার হারাবে তার আয়ের অর্থ।
ভোরের আকাশ/আসা