logo
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ২০:০৫
পিবিআই প্রধানের মামলায় সাবেক এসপি বাবুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

পিবিআই প্রধানের মামলায়
সাবেক এসপি বাবুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার ও প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. রবিউল ইসলাম সম্প্রতি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন বাবুল আক্তারের পিতা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু। আসামিদের মধ্যে বাবুল আক্তার কারাগারে, তার পিতা ও ভাই জামিনে এবং সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন পলাতক। তাই ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

 

ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আজ বৃহস্পতিবার মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ কারণে আজ এই অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

 


জানা গেছে, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য সরবরাহ এবং তা প্রচারের অভিযোগে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২), ২৮(২), ৩১(২) ও ৩৫(২) ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ও ২৫(ঘ) ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি ইলিয়াস হোসাইন তার ফেসবুক, ইউটিউব চ্যানেল থেকে এসপি বাবুল আক্তারের অডিও কথোপকথন ফাঁস করেন। আর বাবুলের ভাই লাবু ও বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মানববন্ধন করেন। এতে তারা বাবুল আক্তারের মুক্তি চেয়ে মানহানিকর তথ্য ছড়ান। আসামি বাবুল আক্তারের সহযোগিতায় ওইসব তথ্য-উপাত্ত আসামি ইলিয়াসের কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে আসামি ইলিয়াস অডিও তথ্য ফাঁস করেন।

 


গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরের ১০ নভেম্বর বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

 


মামলার এজাহারে বলা হয়, তার নেতৃত্বে পিবিআই দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তকালে প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মিতু হত্যার মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে এবং পুলিশ ও পিবিআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কারাগারে থাকা বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিরা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক বিভিন্ন অপকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্ররোচনায় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন তার ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন।

 


মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পিবিআই ও বিশেষ করে বাদীর (বনজ কুমার মজুমদার) মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন, যা দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে।

 


এজাহারে ওই ভিডিওর বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করে বলা হয়, ইলিয়াস তার বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা, রাষ্ট্রের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস করেছেন। শুধু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে মামলার ২ নম্বর আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু, ৩ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ৪ নম্বর আসামি বাবুল আক্তারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্ররোচনায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসাইন মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুক-ইউটিউবে দেন।

 


২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে গুলি করে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন এসপি বাবুল আক্তার। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতে এ দুজনের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে মুছার নাম উঠে আসে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি নগরীর বাকলিয়া এলাকার এহতেশামুল হক ভোলা সরবরাহ করে বলে জবানবন্দিতে বলা হয়। মুছা ও ভোলা এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত। এরপর আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওই বছর ৫ জুলাই তারা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পরে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান ভোলা।

 


স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনার জেরে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয়েছে বাবুল আক্তারকে। ওই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে গত বছর জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। পিবিআইর তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। বাবুল আক্তারের মামলায় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। এরপর ওই দিনই বাবুল আক্তারের শ^শুর মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলকে আসামি করে পৃথক একটি মামলা করেন। এ মামলায় ওই দিন বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর পিবিআই তাকে রিমান্ডে নেয়। সেই থেকে বাবুল আক্তার কারাবন্দি।

 


শ^শুরের মামলায় বাবুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআই গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে এক নারীর সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে হত্যা করা হয়। তিনি সোর্সের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।

 


গত ১৩ মার্চ বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে চট্টগ্রামের একটি আদালত। মিতু হত্যা মামলার অপর ছয় আসামি হলেনÑ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে মাহমুদা হত্যা মামলার বিচার চলছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা