logo
আপডেট : ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:৫৫
গাজীপুর সিটি নির্বাচন
সহজেই বৈতরণী পার হতে পারছেন না আজমত উল্লাহ খান
শাহীন রহমান

সহজেই বৈতরণী পার হতে পারছেন না আজমত উল্লাহ খান

শাহীন রহমান : দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। মনোনয়নপত্র জমার এই তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ও এই সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আবার বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পরও দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সরকার শাহ নূর ইসলাম ওরফে রনি। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। বিএনপির হাইকমান্ড এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার ছিল এই সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে, কারান্তরীণ বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন আগেই তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামিক আন্দোলনসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

 

এদিকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্রও জমা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে যান জাহাঙ্গীর আলম। এর কিছু সময় পর প্রথমে তার মা জায়েদা খাতুনের ফরম জমা দেন। এরপর কর্মী-সমর্থকরা জাহাঙ্গীর আলমের নামে সংগ্রহ করা ফরম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেন।

 

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়। অবশেষে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার খবরটি মুহূর্তেই মহানগরে ছড়িয়ে পড়ে। তার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ফেরে প্রাণচাঞ্চল্য।

 

এদিকে জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি নেতার ভাতিজার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার মাধ্যমে এ সিটিতে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছে। একই সঙ্গে তারা এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলারও ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নে বৈতরণী পার হওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। যদিও মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন না আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ, তারা সবাই আমার সঙ্গে আছে। সবাই আমার পক্ষে আছে। এখানে জাহাঙ্গীর নিয়ে কোনো চাপ ফিল করার কারণ নেই।

 

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আরেকবার পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। নির্বাচনে সাধারণ জনগণকে যে ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমাকে বরখাস্ত করে তাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে চ্যালেঞ্জটা নিতে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজে মনোনয়ন ফরম তুলেছি।

 

দলগতভাবে বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সরকার শাহ নূর ইসলাম ওরফে রনি। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন হাসান উদ্দিন। তাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। শাহ নূর ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম সরকারও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুব ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক। নুরুল ইসলাম বর্তমানে টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় জেলে খাটছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সরকার শাহ নূর ইসলাম। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকার শাহ নূর ইসলাম বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের ছেলে। আমার বাবা ও চাচা বিএনপির ত্যাগী নেতা। আমি নগরের প্রতিটা এলাকায় ঘুরেছি। মানুষের মধ্যে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। তাই আমি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই।’

 

এদিকে গত ১৭ এপ্রিল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে হাসান উদ্দিন সরকার বলেছিলেন, ‘দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করব। দল সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা কৌশল গ্রহণ করব। আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ইঙ্গিত দেন এ সময়।

 

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীরা ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। ৯ মে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন আজমত উল্লাহ খান। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে এই নির্বাচনে সহজেই তিনি বৈতরণী পার হতে পারছেন না।

 

 ভোরের আকাশ/আসা