logo
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১০:৩৪
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর ‘বিশেষ দৃষ্টি’ বিএনপির
এম সাইফুল ইসলাম

প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর ‘বিশেষ দৃষ্টি’ বিএনপির

এম সাইফুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রভাবশালী ওই তিন দেশে প্রধামন্ত্রীর সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা বিশেষ টিমের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সফর পর্যবেক্ষণ করছেন।

 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে নিজেদের দাবির প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আনতে দেশ তিনটিতে বিএনপির সংশ্লিষ্ট ইউনিটও বেশ সক্রিয়।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে তাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার চেয়ে তারা জনগণের মনোভাবের ওপর দৃষ্টি দিচ্ছেন। তবে নির্বাচনের আগের এ সফরে অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রকৃতপক্ষে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বাইরের চাপ সামলে প্রধানমন্ত্রীর নানাবিধ কৌশল ও তৎপরতার বিষয় তারা খোঁজ রাখছেন। জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

ইতোমধ্যে তার জাপান সফর শেষ হয়েছে। শুক্রবারই তিনি ওয়াশিংটনের উদ্দেশে জাপান ত্যাগ করেন। ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। আর ১৫ দিনের টানা সফর শেষে আগামী ৮ মে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

 

প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফরের আগে ২৪ এপ্রিল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, জাপান সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন সফর করবেন। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের পার্টনারশিপের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের আমন্ত্রণে টোকিও থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তিনি ব্রিটেনের রাজা চার্লস (তৃতীয়) এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

 

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিসা বিসওয়ালের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান বক্তা হিসেবেও বক্তব্য রাখবেন। ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক কমিউনিটি ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

 

৪ মে লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৫ ও ৬ মে লন্ডনে ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরে তার সঙ্গে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল সাক্ষাৎ ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হতে পারেন। এছাড়া তিনি লন্ডনের একটি হোটেলে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনা ও মতবিনিময় অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ৮ মে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন এবং ৯ মে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ীই তিন দেশ সফরে আছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার জাপান এবং প্রভাশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের কারণেই এ সফরের দিকে বিশেষ নজর দেশের রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।

 

দলটি মনে করছে, রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেও শেখ হাসিনার মাথায় রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিশ্বের পশ্চিমা দেশগুলো যখন গত দুই নির্বাচনকে ত্রুটি পূর্ণ উল্লেখ করে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ করার ব্যাপারে সোচ্চার, তখন প্রধানমন্ত্রী এ সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন এ অঞ্চলে একটি মডেল হয়, তা দেখতে চেয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতেই দীর্ঘ সফরে বলে বিএনপির মনে করছে। বিএনপি যে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে আসছে, সেটি যে বর্তমানে অসাংবিধানিক দাবি, তা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা।

 

এছাড়া আগামী বর্তমান সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি তিনি ব্যক্ত করবেন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নিজের পক্ষে জনমত তুলে ধরতে এ সফরে বিশেষ কাজ করবেন। এছাড়া তার সরকারের আমলে করা উন্নয়ন কর্মকান্ড ও তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যরা এসব বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী সফরের যাওয়া তিন দেশের বিএনপির সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে সক্রিয় থাকতেও বলেছে বিএনপি। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও লন্ডনে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানা গেছে। কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি বিএনপির দাবির পক্ষে জনমত গঠনে সভা সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

 

বিএনপির দাবির প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি রাখতে বেশ কর্মকান্ডও পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট ইউনিট। বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটির দুই সদস্য ও দলটির একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দলটির কোনো নেতা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছেন না। এ বিষয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির মূল শক্তি।

 

আমরা দেশের মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাসী। বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছে। পাশাপাশি বিদেশিদের সঙ্গে যতটুকু কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখা দরকার, ততটুকুই রাখছে বিএনপি।

 

প্রধানমন্ত্রী সফররত দেশগুলোর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধান বড় এ শক্তিগুলো তাদের আরেকবার ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতায় চাইবে। সে লক্ষ্যে তিনি নির্বাচনের আগে হয়তো এসব দেশ সফর করছেন। আর দল হিসেবে বিএনপি কূটনৈতিক কর্মকান্ডের নজর রাখলেও প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে নজর রাখছেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিচ্ছেন। মানুষ সেখানে অসহায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত। তিনি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।

 

তাই বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা চুক্তির নামে তিনি তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন নির্বাচনের আগে। আগামীতে ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতা পাওয়ার জন্যই এ সফর উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার দরকার আছে বলে মনে হয় না।

 

ভোরের আকাশ/নি