বগুড়ার জেলা শহরের মাঠ জুড়ে নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কেউ ধান কাটছে। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বগুড়া জেলার প্রত্যেক উপজেলায় এবারে ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কৃষকরা বলছে, ৪০ ভাগ ধানই কাটার উপযোগী হয়েছে। আর ১ সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে।
তবে সার, কিটনাশক ও শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। এখন শ্রমিক পেলেও পুরো মৌসুমে শ্রমিক সংকট নিয়েও ভাবছেন কৃষক।
এমন পরিস্থিতে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। পাশাপাশি খরচও কমে আসবে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার এলাকা ঘুরে কৃষকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়। তবে ধান কাটা নির্ভর করে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের শ্রমিকের উপর। এই শ্রমিকরা এসে ধানকাটা মাড়াই শুরু করে এতে শ্রমিকের দাম কম পড়ে।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের ধান চাষী গাজীউল হক জানান, ১২ বিঘা জমিতে মিনিকেট জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। কাটা মাড়াই শুরু করেছেন ৩ বিঘা কাটা মাড়াই সম্পূর্ণ হয়েছে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৪ মণ করে ফলন পেয়েছেন।
গাড়ীদহ মডেল ইউনিয়নের বাংড়া গ্রামের ধান চাষী সাদেকুর রহমান বলেন, এবার পোকার মাকড় বেশি দেখা দিলেও কিটনাশক প্রোয়োগ করার পর তা সেরে গেছে। আমি এবার ৮ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। তবে খরচ বাদ দিয়ে ৩ হাজার টাকা জমিতে থাকবে।
শাহাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ি এলাকার আতাউর রহমান জনান, আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। তবে ধানের দাম বৃদ্ধি থাকায় প্রতি বিঘার ধান বিক্রি করা হচ্ছে ২২ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা । গজীউর রহমান জনান ৫ বিঘা আবাদ করছে। ধান চাষে লাভের মুখ দেখেছেন।
গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন এর কালাই হাটা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে বোরো ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে বিঘায় ১৬ থেকে ২০ মন ধান পাচ্ছি, এখন বাজারে ভালো দাম পেলে তবেই আমাদের স্বস্তি।
রংপুর পীরগঞ্জ থেকে আশা শ্রমিক সাইফুল ইসলাম জানান, ৪ হাজার ৮শ টাকা বিঘায় চুক্তি দিয়েছেন। তারা জমি থেকে ধান কাটা মাড়াই করে দেওয়া পর্যন্ত। ৫ জনে ১ বিঘা করে জমির ধান কাটা মাড়াই করতে পারে।
জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে বিআর-২৮ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৩০ টাকা, মিনিকেট ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা এবং স্থানীয় কাটারী ১০২০ থেকে ১১৭০ টাকা, আতপ ৯০ (সুগন্ধী) ধান ১৯২০ টাকা মণ দরে।
শেরপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি জিএম মাসুদ, সময়মত পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করায় ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দির্শেশনায় ১ ইঞ্চি জমি খালি থাকবে না। এরই লক্ষে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বোরো ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে কৃষি কর্মীদের অনেক পরিশ্রম করছেন। এ ছাড়াও চাষীরা বোরো ধানের ফলন ভালো করার জন্য উঠে-পরে লেগেছিলেন। আশানুরুপ ফলন হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, বগুড়ায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩ মেট্রিকটন। গত বছরে বোরা চাষ হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে।
বগুড়ায় এ পর্যন্ত ধান কাটার উপযোগী হয়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। যার পরিমান ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৫৭০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
আগামী ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অধিকাংশ জমির ধান কাটার উপযোগী হবে এমনটাই আশা করছেন জেলার কৃষি কর্মকতারা।
ভোরের আকাশ/নি