মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধস হয় ২০১০ সালে। এরপর চলে গেছে ১৩ বছর। সেই ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যাংক, বিমা, আর্থিক, প্রকৌশল ও বস্ত্রসহ সব খাতের বিনিয়োগকারীরা। বড় পতনে শেয়ারদর নেমে যায় তলানিতে। এরপর সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে প্রায় সব খাতের বিনিয়োগকারী লোকসান কাটিয়ে উঠেছেন।
কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি বেশিরভাগ ব্যাংক শেয়ারধারীদের। বরনং এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছেন তারা। এখনো ক্ষত শুকায়নি এ খাতের বিনিয়োগকারীদের। ফলে তাদের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১০ সালের পর ব্যাংক খাতের হলমার্ক, বিসমিল্লাহ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিসহ আরো কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এ খাতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে এ শেয়ার চাহিদা কমতে থাকে। অথচ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব খাতের কোম্পানির মধ্যে মৌলভিত্তির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে এ খাতের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতে রয়েছে ১০-এর নিচে।
অন্যদিকে খাতটিতে অন্য খাতের মতো দুর্বল কোম্পানি নেই বললে চলে। লভ্যাংশ দেয়ার হারও রয়েছে অন্য খাতের তুলনায় সন্তোষজনক। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই এ খাতে।
২০১০ সালে যখন পুঁজিবাজারে ধস নামে তখন অল্প সময়ের ব্যবধানে সব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি অতিমূল্যায়িত ছিল ব্যাংক শেয়ার। এ কারণে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
উদাহরণস্বরূপ ২০১০ সালের ইউসিবির শেয়ারদর ২ হাজার ৮০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তখন এ শেয়ারের অভিহিত দর ছিল ১০০ টাকা। পরে লট ভেঙে একটি শেয়ার ১০টি শেয়ারে পরিণত হয়। অভিহিত মূল্য দাঁড়ায় ১০ টাকা। সেই হিসাবে এ ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়ায় ২৮০ টাকা। বর্তমানে এ শেয়ার ১২ থেকে ১৩ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানিরই অবস্থা এমন ছিল।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ খাতে তালিকাভুক্ত ৩৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি ব্যাংক শেয়ারের দর রয়েছে ৩০ টাকার ওপরে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ঘুরে না দাঁড়ানোর উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে এ খাতের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকা। ২০১০ সালের পর থেকে বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে। কাক্সিক্ষত দর না বাড়ায় এসব শেয়ার থেকে বের হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে লোকসানের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের।
তাদের মতে, খাতটিকে বলা হয় পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। বর্তমানে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে তারা অন্যসব খাত থেকে বেশি নিরাপদে থাকতে পারেন। তবে বিনিয়োগটা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি। যারা অল্প সময়ে পুঁজি দ্বিগুণ করতে চান কিংবা খুব দ্রুত মুনাফা করতে চান, তাদের জন্য এসব শেয়ার নয়।
জানতে চাইলে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, শুধু ব্যাংক খাত নয়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী দ্রুত মুনাফা করতে চান। সে জন্য তারা ঘন ঘন পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনেন। আর এসব কাজ বেশিরভাগ সময় করেন অন্যের কথার ওপর নির্ভর করে।
এ কারণে তারা কোনো খাত থেকেই ভালো মুনাফা করতে পারেন না। বিনিয়োগকারীদের একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, বিনিয়োগ করতে হবে অবশ্যই ভালো কোম্পানিতে এবং তা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ছে না শুধু বিনিয়োগকারীদের অনীহার কারণে। তারা যখন যে শেয়ারে ঝোঁকেন তখন সেই খাতের শেয়ারদর বাড়ে। কিন্তু কেন যেন ব্যাংক শেয়ারের প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। তারা জাঙ্ক শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবেন না কিন্তু মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগে তাদের অনীহা।
ভোরের আকাশ/নি