logo
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:৩৭
সম্পাদকীয়
রাজধানীতে শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলেছে : জরুরি নিয়ন্ত্রণ চাই

রাজধানীতে শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলেছে : জরুরি নিয়ন্ত্রণ চাই

গত বুধবার ছিল আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘সুরক্ষিত শ্রবণ, সুরক্ষিত জীবন’। রাজধানীতে শব্দের তীব্রতা মানমাত্রা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। শব্দদূষণের ব্যপ্তিও বেড়েছে। রাজধানীতে একসময় শব্দদূষণ হতো দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা। এখন দিনে গড়ে ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শব্দদূষণ হচ্ছে।

 

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

 

শব্দদূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। ঢাকার শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, ঘরের ভেতর শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল আর বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। অথচ রাজধানী ঢাকায় শব্দের মাত্রা কখনো কখনো ১১৯ ডেসিবেলও হয়।

 

শব্দ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শব্দদূষণের কারণে সব বয়সের মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দেয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। উচ্চশব্দের মধ্যে থাকলে মানুষের শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার শিশুদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। এতে তাদের মনোযোগ দেয়ার ও কিছু পড়ার ক্ষমতা লোপ পায়।

 

রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণ ঘটে। শব্দদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- সড়কে যানজটকালে যানবাহন থেকে হর্ন বাজানো, উড়োজাহাজ, ট্রেন, শিল্পকারখানা, বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ, উচ্চস্বরে মাইক বাজানো ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে সৃষ্ট শব্দ।

 

২০০৬ সালে প্রণীত বিধিমালায় আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং নীরব এলাকা হিসেবে ভাগ করে সময় এবং শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, শব্দদূষণে দোষী প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

কিন্তু প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই এ বিধিমাল মানা হয় না। মানানোর দায়িত্ব যাদের তাদের কর্মকান্ডও চোখে পড়ার মতো নয়।

 

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। যেসব উৎস এবং জায়গায় শব্দদূষণ হয় তা নজরদারি করতে হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

 

এসব কাজ অবশ্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা দপ্তরকেই করতে হবে। তাদের কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর বিধিমালা সংশোধনের কাজ করছে বলে জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, বিধিমালা সংশোধন করাই যথেষ্ট নয়- এর কার্যকর প্রয়োগ করা জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/নি