ব্যস্ততম একটি সড়ক। দুই পার্শ্বে দোকান, দোকানের মালামালও সড়কের ওপরেই রাখেন ব্যবসায়ীরা। তার ওপর আবার সড়ক দখল করে ভারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও নছিমন-করিমন দাঁড় করিয়ে মালপত্র ওঠানামা করানো হয়। ফলে শহরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এটি এখন প্রতিনিয়ত চিত্র।
এ কারণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে সড়কে যাতায়াতকারীসহ ব্যবসায়ীদের। দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটও। এ অবস্থা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরবাজারের। পথচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস টার্মিনাল ও ট্রাফিক পুলিশ না থাকা এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট তাদের নিত্যসঙ্গী। সড়কে দিনভর ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রেখে মালপত্র খালাস ও ফুটপাত দখল যানজটের প্রধান কারণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরশহরের নিমতলা মোড় হতে কালীবাড়ী পর্যন্ত সড়কের বাগদাদ বেকারি সংলগ্ন হেরা ট্রেডার্স নামের হার্ডওয়ারের দোকানের সামনে ১০ চাকার ১৮ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন রড ও অ্যাঙ্গেলবাহী ট্রাক সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গাজুড়ে দাঁড় করিয়ে মালামাল নামানো হচ্ছে। একইভাবে মেহের ট্রেডার্স নামের দোকানের সামনে ১০ চাকার টিনবাহী ট্রাক সড়কের অর্ধেক জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে টিন নামানো হচ্ছে।
তার পার্শ্বে ওয়াহেদ আলীর দোকানের সামনে মিনি ট্রাক লাগিয়ে সিগারেট, বিড়িসহ বিভিন্ন জর্দ্দা ও ম্যাচসহ মালামাল ওঠানামা করা হচ্ছে। এর দক্ষিণ পার্শ্বে ট্রাক দাঁড় করে ডালের বস্তা ও তেলের ড্রাম নামানো হচ্ছে। একইভাবে ননীগোপাল মোড় থেকে পুরাতন বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত সড়কের নছিমন-করিমনসহ ১০ চাকার বড় ট্রাক লাগিয়ে ট্রান্সপোর্টসহ বিভিন্ন ডিলারদের গোডাউনে মালামাল ওঠানামা করা হচ্ছে। এতে তীব্র যানজটে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পথচারী আরমান হোসেন ও মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এ সড়কের প্রতিটি দোকানের সামনে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো নজরদারি না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সবাই।
স্থানীয় দাশ মিউজিক্যাল অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেমের সত্বাধিকারী প্রবীর দাশ বাবু, পলাশ দাশ বাপ্পি, ফুলবাড়ী চশমা ঘরের সত্বাধিকারী জহুরুল ইসলাম বলেন, পৌর শহরের এই ব্যস্ততম সড়কটির পার্শ্বের গুটি কয়েকজন ব্যবসায়ী গোটা পৌরবাসীকে জিম্মি করে তাদের নিজ খেয়ালখুশি মতো দোকানের সামনে বড় বড় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান দাঁড় করে মালামাল ওঠানামা করছে।
ফলে গোটা পৌরশহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে প্রায়ই সময় ট্রাকচালক ও পথচারীদেও মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। পূর্বের ইউএনও সকাল ৯ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পৌরশহরে ট্রাক ঢোকা নিষিদ্ধ করলেও বর্তমানে সেই আইন মানছেন না কেউ-ই।
একইভাবে সড়কের ওপর নির্মাণ সামগ্রীও রাখা হচ্ছে সড়কের অর্ধেক জায়গা দখল করে। যানজট নিয়ে কথা হয় কলেজ শিক্ষার্থী রক্তিম, আহসান হাবীব, ফরহাদ হোসেন ও স্কুল শিক্ষার্থী স্বর্ণা রাণী, টুটুল রায় ও আইরিন মুনতাহার সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, সকাল ৭টা থেকে সড়কের ওপর ট্রাক রাখার কারণে যানজটে পড়ে তারা সময় মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছেন না। অনেক সময় কালীবাড়ী এলাকা থেকে নিমতলা মোড় পার হতে ৪ থেকে ৬ মিনিটের পথ লেগে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট।
এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মালপত্র ওঠানামা বন্ধ করার দাবি তাদের। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মো. সাজু, মাধবী রানী ও সাবেকুন নাহার বলেন, বাচ্চদের একা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো যায় না। নিমতলা থেকে কাটিহারধর ব্রিজ পর্যন্ত যে যানযট থাকে তা বলার বাহিরে। ২/৩ মিনিটের রাস্তা পার হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। যানযটের কারণে অনেকসময় দুর্ঘটনাও ঘটছে পথচারীদেও সঙ্গে যানবাহন চালকদের হাতাহাতিও হচ্ছে। আমরা চাই সড়কটিতে যেন কোনোপ্রকার বড় যান না প্রবেশ করে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মালামাল ওঠানামার নির্ধারিত স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর ট্রাক দাঁড় করতে হচ্ছে। পৌরমেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ব্যবসায়ীসহ ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে একাধিকবার এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের বলেছি ভোরে এবং সন্ধ্যার পর বড় গাড়ি ঢুকিয়ে মালপত্র ওঠানামা করাতে। কিন্তু তারা বলার পর দুয়েকদিন মানলেও পরে আর তা মানে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেন না।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে অভিযান চালানো হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি