logo
আপডেট : ৩ মে, ২০২৩ ১০:৪৭
পাহাড়ে তিন লাখ লোকের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, এক যুগে মৃত্যু ৩১৩
এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

পাহাড়ে তিন লাখ লোকের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, এক যুগে মৃত্যু ৩১৩

কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর পাহাড় দখল করে এরা বসবাস করছেন। যা কক্সবাজারের মোট বনভূমির এক তৃতীয়াংশ। এর বাইরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে ৪ হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। আসন্ন বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতলভূমিতে আনা না হলে ব্যাপক প্রাণহানিসহ মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

 

রোহিঙ্গাদের বাদ দিলে এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি আরো প্রায় ৫০ হাজার পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বসতি স্থাপনের জন্য কক্সবাজার অঞ্চলে কাটা হয় নির্বিচারে পাহাড়। বিশেষ করে বর্ষা এলেই শুরু হয় পাহাড়কাটার ধুম, লক্ষ্য ভূমি সমতল করে বসতি গড়া। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, গত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩১৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ সেনাসদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়।

 

২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন।

 

২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১১-১৩ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৯ জন। ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে ৫ জন। ২০১৬ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন। ২০১৭ সালে ২৬ জন। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় ২৮ জন।

 

২০১৯ সালে ২২ জন। ২০২০ সালে ১৫ জন, ২৭, ২৮ জুলাই ২ দিনে মারা যায় ১৪ জন। ২০২২ সালে মারা যায় ২৫ জন। চলতি বছর বর্ষার আগেই রামু টেকনাফে পাহাড় ধসে মারা যায় ৫ জন। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মারা যায় ২৮ জন।

 

পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, প্রতি বছর কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুধুমাত্র বর্ষা এলে কিছুটা চোখে পড়ে। বর্ষা চলে গেলে থেমে যায় সবকিছু। এর ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে কক্সবাজারের পাহাড় নিধন।

 

কতটা পাহাড়ি এলাকা অবৈধ দখলে আছে তা জানা গেলেও কি পরিমাণ খাস জমি অবৈধ দখলে রয়েছে তার সঠিক এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না।

 

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। এসব জমি দখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ।

 

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব লোকজনকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন। মাইকিং করে সতর্কমূলক প্রচারণা চালান। এ সময় কিছু মানুষ সরে এলেও পরে আবার এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।

 

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ১৫২ স্পটে ১২৯৮ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভায় ৬ ওয়ার্ডে ৭ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবারের বৃষ্টিতে ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হবে। পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) সভাপতি ফজলুল কাদের চেীধুরী জানান, কক্সবাজারের পাহাড় সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করলে প্রতি বছর এতো প্রাণহাণির ঘটনা ঘটতো না।

 

সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে বর্ষার আগেই তাদের পাহাড় থেকে নামিয়ে আনা উচিত।

 

ভোরের আকাশ/নি